1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯ পূর্বাহ্ন

ভিটামিন ডি কি করোনার ঝুঁকি কমায়?

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২০

করোনা মহামারির শুরুতে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যাদের শরীরে ভিটামিন-ডি কম তারা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিল আকার ধারণ করে। মৃত্যুহারও তাদের বেশি। তবে বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে নানা ধরনের মতামত দিয়েছেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বস্টন ইউনিভার্সিটির ড. মাইকেল হলিক বলেছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-ডি নিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এ নিয়ে ড. হলিক ও তার সহযোগীদের করা গবেষণায় বলা হয়, ভিটামিন-ডির স্বল্পতার কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স ওয়ানে (প্লস ওয়ান) প্রকাশিত হয়েছে। হলিক বলেছেন, ‘আপনার যত ভিটামিন-ডি থাকবে, ততই করোনার ঝুঁকি কমবে।’ ভিটামিন ডির বড় উৎস সূর্যের আলো। অনেকেই এ থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে শীতের মাসগুলোয়, জানান তিনি।

আবার ক্লিনিক্যাল অ্যান্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, স্পেনের কিছু হাসপাতালে দেখা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে যারা বেশি মৃত্যুঝুঁকিতে ছিলেন তাদের ভিটামিন ডি কম ছিল। যদিও পরে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন বৃদ্ধ, ইনস্টিটিউশনে থাকতেন এবং তারা আগে থেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। এজন্য তাদের মৃত্যুহার বেশি ছিল।

গবেষণায় যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিটামিন ডির অভাবে হৃদরোগ ও হাড় দুর্বল হয়ে যায়। কমে যায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাও সৃষ্টি করে। এ কারণে করোনা রোগীদের শরীরের উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে। সুস্থ হতে এবং হাসপাতালে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনা মহামারির পর থেকেই চিকিৎসকরা ভিটামিন ডি অনেক বেশি দিচ্ছেন রোগীদের। তার কারণ, শুরুর দিকে গবেষণায় এসেছে, যাদের ভিটামিন ডি কম রয়েছে শরীরে তারা করোনায় আক্রান্ত হলে সিভিয়ারিটি ও মৃত্যুঝুঁকি বেশি। আর এসব গবেষণার ফলাফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়ায় তারা নিজেরাই ভিটামিন ডি কিনে খেয়েছেন।’

হাসপাতালটির মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে নির্ধারিত মুগদা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগ ভর্তি থাকা ১৭৪ জন রোগীকে নিয়ে এ নিয়ে গবেষণা করে। গত ২২ ডিসেম্বর গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তাতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আসেনি। শরীরের ভিটামিন ডির সঙ্গে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের ভয়াবহতা এবং মৃত্যুঝুঁকির সম্পর্ক নির্ণয় হয়নি বলে জানানো হয়েছে।’

অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘১৭৪ জন রোগীকে নিয়ে করা এই গবেষণা খুব ছোটও নয় আবার বড়ও নয়।’

হাসপাতাল সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে কিছু তথ্য আনা হয় এই গবেষণার জন্য। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালে কোম্পানিগুলোর ভিটামিন বিক্রির হারের চেয়ে চলতি বছরে সেই বিক্রি বেড়েছে অনেক বেশি। চিকিৎসকরা বলছেন, ২০১৬ সালে বিক্রি ছিল শূন্য দশমিক তিন শতাংশ, করোনা মহামারির কারণে সেটা বেড়ে হেয়েছে শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।

‘তবে ভিটামিন ডির সঙ্গে করোনাতে আক্রান্তদের জটিল অবস্থা বা মৃত্যুহারের খুব বেশি সম্পর্ক নেই। যদিও একই সঙ্গে দেখা গেছে, গবেষণাতে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশের শরীরে ভিটামিন ডির পরিমাণ অপর্যাপ্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, সিভিয়ারিটি বা মৃত্যুহার, কোনও কিছুর সঙ্গেই ভিটামিন ডির কোনও সম্পর্ক নেই। তবে একই সঙ্গে এটাও দেখা গেছে, গবেষণাতে অংশ নেওয়া ৭৬ শতাংশের ভিটামিন ডির অভাব রয়েছে। আমরা বলেছি, ইনসাফিসিয়েন্ট ভিটামিন’, বলেন অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন।

জানা যায়, গবেষণাতে বাকি ২৪ শতাংশের স্বাভাবিক মাত্রার ভিটামিন ডি পাওয়া গেছে। দ্বিতীয়ত, ভিটামিন ডির সঙ্গে কোভিডের সিভিয়ারিটি অথবা মৃত্যুর সঙ্গে কোনও পরিসংখ্যানগত গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক নেই। তৃতীয়ত বয়স এবং লিঙ্গভেদেও ভিটামিন ডির সঙ্গে সেরকম বলার মতো কোনও সম্পর্ক নেই। যেমন আমাদের দেশে বলা হয়, নারীদের ভিটামিন ডি কম থাকে।

চিকিৎসকরা বলছেন, বিশ্বজুড়ে করোনার শুরুতে জার্নালগুলোতে জানানো হয়, করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ভিটামিন ডির অভাব যাদের রয়েছে তাদের কোভিড হলে সিভিয়ারিটি বেশি এবং তাতে করে মৃত্যুঝুঁকিও বেশি। এই হাইপোথিসিসের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়েই নানা কাজ হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ ব্রিটিশ অ্যাসোসিয়েন অব মেডিসিনের গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত গাইডলাইনে বলা হয়েছে, করোনাতে আক্রান্তদের মধ্যে ভিটামিন ডির সঙ্গে সিভিয়ারিটি এবং মৃত্যুঝুঁকির তেমন কোনও সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

‘আমাদের গবেষণাতেও আমরা এটাই দেখতে চেয়েছিলাম যে, ভিটামিন ডির সঙ্গে কোভিডের সিভিয়ারিটি অথবা কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহারের কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা। কিন্তু আমাদের স্টাডিতে কোনও “সিগনিফেকেন্ট রিলেশন” পাইনি,’ বলেন অধ্যাপক রুবিনা ইয়াসমিন।

প্রসঙ্গত, শূন্য থেকে ১০ পর্যন্ত ডেফিসিয়েন্ট, ১১ থেকে ৩০ পর্যন্ত থাকলে ইনসাফিসিয়েন্ট আর ৩০-এর উপরে বলা হয় নর্মাল বা স্বাভাবিক।

আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর– এই তিন মাসের ভর্তি রোগী নিয়ে গবেষণা করা হয়। এ গবেষণার প্রধান ছিলেন মুগদা মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটু মিয়া। তার অধীনে মেডিসিন বিভাগের সাত জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে এ গবেষণা পরিচালিত হয়।

জানতে চাইলে ন্যাশনাল গাইডলাইন অন দ্য কোভিড-১৯ কমিটির সদস্য ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ভিটামিন ডির সঙ্গে ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পর্ক রয়েছে, এটা বিশ্বজুড়েই অনেক গবেষণায় প্রমাণিত। কিন্তু যদি কারও ভিটামিন ডির অভাব থাকে সেক্ষেত্রে ভিটামিন তাদের ইমিউনিটিতে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যদি অভাব না থাকে তাহলে কোনও কিছু দিয়ে ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে, এমন কোনও হার্টকোর প্রমাণ নেই।’

‘কোনও ওষুধের খুব ভালো ফলাফল দেখতে চাইলে আরসিটি (রেন্ডোমাইজ কন্ট্রোল ট্রায়াল) পদ্ধতির মাধ্যমে যেতে হবে। কিন্তু ভিটামিন ডির ক্ষেত্রে সেটা খুব বেশি নেই। সে হিসেবে কোনও সরাসরি প্রমাণ নেই যে ভিটামিন ডি দিলে কারও কোভিড-১৯ ভাইরাসকে আটকানো যাবে, ঠেকানো যাবে।’ বলেন তিনি।

অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘বিশ্বজুড়েই ভিটামিন-ডি ট্রাই করে দেখা হয়েছে এটা কোভিড-১৯ ভাইরাসকে প্রিভেনশন করতে পারে কিনা অথবা কোনও লাভ হয় কিনা। কিন্তু আমি বলবো, হার্টকোর কোনও প্রমাণ কেউ দেখাতে পারেননি। কেবলমাত্র করোনাতে আক্রান্ত হলে ভিটামিন ডি রিকমেন্ড করবো কিনা যদি বলা হয়, তাহলে বলবো এই অসুখের জন্য এর কোনও রিকমেন্ডেশন নেই। যদি কারও ডিটামিন ডির অভাব থাকে তাহলে কাউকে এটা দেওয়া যাবে। কিন্তু ডিজিজ সিভিয়ারিটি বা মর্টালিটির জন্য কোনও প্রমাণ নেই যে ভিটামিন ডি দিয়ে লাভ হতে পারে।’

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব