করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত বছর দেশে যত মানুষ মারা গেছেন, তার চেয়ে প্রায় ২২ গুণ বেশি মৃত্যু হয়েছে হৃদরোগে বা হার্ট অ্যাটাকে। আর করোনার এক বছরে দেশে ব্রেইন স্ট্রোক বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত মৃত্যু দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২০ সালে ব্রেইন স্ট্রোকে মারা গেছেন ৮৫ হাজার ৩৬০ জন, যা আগের বছর (২০১৯ সাল) ব্রেইন স্ট্রোকে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৫ হাজার ৫০২।
এতে বলা হয়েছে, দেশে ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০-এ বিভিন্ন কারণে বেশি মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার মানুষের। এ সময় ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে কমেছে ডেঙ্গি ও চিকুনগুনিয়ায় মারা যাওয়ার সংখ্যা।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বুধবার পরিসংখ্যান ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এমএসভিএসবি প্রকল্প থেকে জরিপের মাধ্যমে এই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং এমএসভিএসবি প্রকল্পের পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।
ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, ২০২০ সালে করোনায় মারা গেছেন ৮ হাজার ২৪৮ জন। একই সময়ে হৃদরোগে মারা গেছেন ১ লাখ ৮০ হাজার ৪০৮ জন। অর্থাৎ করোনার চেয়ে হৃদরোগে ২১ দশমিক ৮৭ গুণ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে হৃদরোগে মারা যান ১ লাখ ৪৭ হাজার ২৫৯ জন। এছাড়া সার্বিকভাবে হার্টের অন্যান্য অসুখে মারা গেছেন ২০১৯ সালে ৬৭ হাজার ৭ জন এবং ২০২০ সালে ৪৩ হাজার ২০৪ জন। তিনি আরও বলেন, মানুষের ধারণা এবং তথ্যের মধ্যে যে ব্যাপক ফারাক থাকে, তারই প্রমাণ মিলেছে এই জরিপে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে দেশে ৮ লাখ ২২ হাজার ৮৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২০২০ সালে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ২৫৩ জন। অর্থাৎ এক বছরে মৃত্যু বেড়েছে ৩১ হাজার ৪১২ জনের।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ডায়াবেটিসে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছে ২২ হাজার ৩০ জনের, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৬ জন। কিডনি রোগে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৬২২ জন এবং ২০২০ সালে ২৮ হাজার ১৭ জনের। ব্রেইন স্ট্রোকে ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৫০২ জন এবং ২০২০ সালে ৮৫ হাজার ৩৬০ জন মারা গেছেন। স্তন ক্যানসারে ২০১৯ সালে মারা গেছেন ১ হাজার ১৮০ জন এবং ২০২০ সালে ৩ হাজার ১১ জন। এছাড়া বেড়েছে ব্রেইন ক্যানসারের মৃত্যুর সংখ্যা- ২০১৯ সালে ছিল ৩ হাজার ৫৪১ জন, ২০২০ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৩৭ জনে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ডেঙ্গিতে মারা গেছেন ২ হাজার ৩৬০ জন, ২০২০ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮৬ জনে। এছাড়া চিকুনগুনিয়ায় ২০১৯ সালে মারা যান ৪ হাজার ৪৫৮ জন। ২০২০ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫২৪ জনে। তবে যৌনরোগে ২০১৯ সালে ১৩১ জন মারা গেলেও ২০২০ সালে একজনও মারা যাননি। এছাড়া সুতিকা এবং এইচআইভি/এইডস-এ একজনও মারা যাননি। অপুষ্টিজনিত কারণের মৃত্যুহারও কমেছে।
তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারিকালীন মৃত্যুর অবস্থা দেখার জন্য আমরা এ প্রতিবেদনটি তৈরি করেছি।
প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক জানান, দেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকার ২ লাখ ৯৮ হাজার ৮১০টি খানা (পরিবার) থেকে প্রতিনিয়ত নির্ধারিত গণনাকারীরা তথ্য সংগ্রহ করছেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে রিয়েল টাইম ডেটা নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এটির চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হবে আগামী জুনে। তিনি জানান, প্রাথমিক হিসাবে ২০১৯ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। ২০২০ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার জনে।