রাজশাহী মহানগরীতে এখন অহরহই নারী দিয়ে পাতা হচ্ছে ফাঁদ। সক্রিয় রয়েছে বেশকিছু চক্র। এসব চক্রের নারী সদস্যরা কখনও প্রেমের ফাঁদে ফেলে আবার কখনও সময় কাটানোর নামে টার্গেট করা ব্যক্তিকে বাসায় ডাকছে। তারপর বাসায় গেলেই দেখানো হচ্ছে তাদের আসল রূপ।
ব্ল্যাকমেইল করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে টাকা। সবশেষ এমন মধুচক্রের ফাঁদে পড়লেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের রাজশাহীর একটি শাখার ব্যবস্থাপক। তাকে নারীচক্রের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে এক নারীসহ চারজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
গ্রেফতার চারজন হলেন- রাজশাহীর চারঘাটের মনোয়ার হোসেন (৩৬), সেলিনা আক্তার ওরফে সাথী (২৫), খাইরুল ইসলাম (২৬) এবং পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর তুহিন সরকার (৩২)। এদের মধ্যে মনোয়ার হোসেন চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী। তিনি সেনাবাহিনীর সাবেক সিপাহী।
তাদের গ্রেফতারের পর শনিবার রাজশাহী মহানগর পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
তিনি জানান, মনোয়ার হোসেন ও সাথী নিজেদের স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ২৬ জানুয়ারি নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার হড়গ্রাম নতুনপাড়া রানীদীঘি এলাকার একটি ভবনের তৃতীয়তলা ভাড়া নেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সাথী গত বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে বাসায় ডেকে নেন।
এ সময় পাশের ঘরে লুকিয়ে ছিলেন মনোয়ার, খাইরুল ও তুহিন। সাথী এবং ওই ব্যাংক কর্মকর্তা যখন একই ঘরে ছিলেন তখন তারা সেই ঘরে যান। এ সময় মনোয়ার ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে, খাইরুল পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্য হিসেবে এবং তুহিন সাংবাদিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন।
মনোয়ার ও খাইরুল ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে নারীসহ গ্রেফতার করতে চান। খাইরুল ভুক্তভোগীর হাতে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেন। মনোয়ার ভুক্তভোগীর পেছনে নকল পিস্তল ঠেকিয়ে যা আছে দিয়ে দিতে বলেন। আর তুহিন হুমকি দেন টাকা না দিলে নারীসহ ভুক্তভোগীর ছবি পত্রিকায় ছাপিয়ে দেবেন।
এমন পরিস্থিতিতে ওই ব্যাংক কর্মকর্তা তার কাছে থাকা ২৬ হাজার টাকা দিয়ে দেন। এছাড়াও পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে আরও ৪৪ হাজার টাকা দেন। তারপরও তাকে ছাড়া হয়নি।
এদিকে বিকাশের মাধ্যমে এভাবে টাকা নেয়ায় ওই ব্যাংক কর্মকর্তার একজন সহকর্মী আঁচ করেন তিনি বিপদে পড়েছেন। তিনি ছুটে যান আরএমপির ডিবি কার্যালয়ে। তার দেয়া মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের পাশাপাশি বাসা থেকে চারজনকে আটক করা হয়।
আরএমপি কমিশনার জানান, প্রতারকরা প্রায় এক মাস আগে বাসাটি ভাড়া নিয়েছেন। কিন্তু তারা নিয়মিত বাসায় থাকতেন না। এ বাসায় তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নারী দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসিয়ে ভুয়া ডিবি ও সাংবাদিক পরিচয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে নকল পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, ডিবির জ্যাকেট, ছয়টি মোবাইল সেট, নয়টি সিমকার্ড, বিদেশি নোট, সেনাবাহিনীর পোশাক পরিহিত চার কপি ছবি এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ভিজিটিং কার্ড জব্দ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকার মধ্যে সাড়ে ১৫ হাজার টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে। আর চারজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলেও জানান নগর পুলিশের কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক।