০১৩ সালের পর প্রথমবারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী মিসরের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে তুরস্ক। আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠে অন্যান্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে তুরস্ক। ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি এমন খবর দিয়েছে।
মিসরেরর প্রথম গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করে সামরিক শাসক ফাত্তাহ আল-সিসি ক্ষমতা দখলের পর আঙ্কারার সঙ্গে কায়ারোর কূটনৈতিক সম্পর্কের নাটকীয়ভাবে অবনতি ঘটে।
এরপর থেকে সিসিকে স্বৈরশাসক বলে আখ্যায়িত করে আসছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বিভিন্ন ইস্যুতে এই দুই আঞ্চলিক শক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে।
লিবিয়া যুদ্ধেও পরস্পর বিপরীত অবস্থান নিতে গেছে তাদের। কিন্তু নিজেদের মধ্যকার মতানৈক্য দূর করতে হাত বাড়িয়ে দেন এরদোগান।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার মুখে প্রতিবেশীদের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হতে দেখা গেছে তাকে।
চলতি মাসের শুরুতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরে জলসীমা চুক্তি নিয়ে কায়রোর সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছেন তুর্কিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসগলু।
পরবর্তীতে এরদোগান বলেন, সিসির সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার ভিত্তি তৈরি করতে তিনি প্রাথমিক আলোচনা শুরু করতে চান।
শুক্রবার ইস্তানবুলে জুমার নামাজের পর তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করাই আমাদের ইচ্ছা। এসব গোয়েন্দা কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগের পর যে ফল আসবে, সেটাকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মিসরের এক কর্মকর্তা বলেন, সার্বভৌমত্বের নীতির প্রতি সম্মান ও আরবদের নিরাপত্তার প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে দু-দেশের মধ্যে আইনগত ও কূটনৈতিক কাঠামো হিসেবে নিয়ে মিসর ও তুরস্কের সম্পর্ক উন্নত করা দরকার।
ব্লুবে অ্যাসেট ব্যবস্থাপনার উঠতি বাজার অর্থনীতিবিদ টিমথি অ্যাশ বলেন, মিসরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া কূটনীতিতে এরদোগানের এক অবিশ্বাস্য দিক বদল। বাইডেনের অধীন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা ও আরও পরিচিত কোনো অবস্থা ফিরে আসায় তিনি এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এরদোগান ও আংকারার প্রতি বাইডেন প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে—প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় যেটা ছিল না।
২০১৩ সালের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবসানের পর তুরস্ক ও মিসর পরস্পরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করেছিল। সিসিকে একজন স্বৈরশাসক আখ্যায়িত করে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিককে হত্যার জন্য তাকে দায়ী করে আসছেন এরদোগান।
কিন্তু দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ তুর্কিশ নেতাকে সম্প্রতি মিসরীয় একনায়ককে নিয়ে খুব একটা কথা বলতে দেখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বিষয়াদিতে নিজের সুরও নরম করতে দেখা গেছে তাকে।
মিসরের সঙ্গে তুরস্কের এই সম্পর্ক গ্রিসকে সম্ভাব্য হতাশায় ফেলে দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
গত বছর কায়রোর সঙ্গে একটি জলসীমা চুক্তি সই করেছে গ্রিস। এতে পূর্ব ভূমধ্যসাগরের একটা অংশ নিজেদের বলে দাবি করেছে তারা।
তবে একই সময়ে লিবিয়ার সঙ্গেও চুক্তি সই করেছে তুরস্ক। গত পাঁচ বছর ধরে চলা নৌসীমা বিতর্ক নিয়ে জানুয়ারিতে গ্রিসের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন তুর্কিরা। মঙ্গলবারও এথেন্সে তাদের বৈঠক রয়েছে।
কাভুসগলু বলেন, আমরা সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নেও প্রস্তুত। অথচ এই দুদেশকে আরব বিশ্বে তুরস্কের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি আবুধাবিকে আমরা আরও ইতিবাচক বার্তা দিয়েছি। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তাদের প্রতি আরও উদার মনোভাব দেখাতে চাচ্ছি আমরা।