1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ, নাকি ক্ষতি - Dainik Deshbani
শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

ব্যাংকে টাকা রেখে লাভ, নাকি ক্ষতি

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • সোমবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২১

ব্যাংকে টাকা রেখে যে সুদ আসছে, তা দিয়ে এই মূল্যস্ফীতির ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। টাকা হিসেবে হয়তো গ্রাহকেরা সুদ পাচ্ছেন ঠিকই, তবে মূল্যস্ফীতি ও টাকার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিলে প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে মূল টাকা কমে যাচ্ছে।

ব্যাংকভেদে বর্তমানে এক বছর মেয়াদি স্থায়ী আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ।অবসরে যাওয়া বেসরকারি সংস্থার কর্মচারী লিয়াকত আলীর ৫ লাখ টাকায় বছরে ব্যাংক সুদ দেয় ৩০ হাজার টাকা। এর মধ্যে কর শনাক্তকরণ (টিআইএন) নম্বর থাকায় কেটে নেওয়া হয় ৩ হাজার টাকা। টিআইএন না থাকলে কাটা হতো সাড়ে ৪ হাজার টাকা। আর বছরে হিসাব পরিচালনার জন্য কাটা হয় ২৫০ টাকা। চেক বইয়ের জন্য আরও ৩০০ টাকা। এর ওপর কাটা রয়েছে ১৫ শতাংশ কর, যা ৮২ টাকা ৫০ পয়সা। আর প্রতিবছর সরকার আবগারি শুল্ক কেটে নেয় ৫০০ টাকা।

এরপর বছরে তাঁর থাকছে ২৫ হাজার ৮৬৭ টাক ৫০ পয়সা। ফলে প্রতি মাসে তাঁর কাছে আসে ২ হাজার ১৫৫ টাকা। অথচ দেড় বছর আগেও লিয়াকত আলী সুদ থেকে পেতেন ৫৫ হাজার টাকা। তখন সুদহার ছিল ১১ শতাংশ। মাশুল ও কর কাটার পর বছরে তিনি পেতেন ৪৬ হাজার টাকা। প্রতি মাসে পেতেন ৩ হাজার ৮৩৩ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে তাঁর আয় কমে গেছে ১ হাজার ৬৭৮ টাকা। শুধু লিয়াকত আলী নন, সুদ আয়ের ওপর নির্ভরশীল সবাই এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সিদ্ধান্তেই বদলে গেছে এসব মানুষের জীবনধারা।

গত বছরের এপ্রিল থেকে ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরই আয় ধরে রাখতে ব্যাংকগুলো হঠাৎ সব ধরনের আমানতের সুদ কমিয়ে দেয়। এখন এক বছর মেয়াদি আমানতে সর্বোচ্চ সুদ ৬ শতাংশ। এর বেশি মেয়াদে সুদ সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ শতাংশ। তবে গ্রাহকেরা বেশির ভাগ এক বছর মেয়াদি আমানত রাখে।

অথচ গত অক্টোবরে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে উঠেছিল, নভেম্বরে তা ৫ দশমিক ৫২ শতাংশে নেমেছে। আর সদ্য শেষ হওয়া ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয় ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ।

এর অর্থ অর্থ হলো, এক বছর আগে যে পণ্য বা সেবার জন্য ১০০ টাকা খরচ করতে হতো, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সেই পণ্য বা সেবার জন্য ১০৫ টাকা ২৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। ফলে ব্যাংকে টাকা রেখে যে সুদ আসছে, তা দিয়ে এই মূল্যস্ফীতির ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। টাকা হিসেবে হয়তো গ্রাহকেরা সুদ পাচ্ছেন ঠিকই। তবে মূল্যস্ফীতি ও টাকার ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনায় নিলে প্রকৃতপক্ষে বছর শেষে মূল টাকাই কমে যাচ্ছে।

অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তা রিজিয়া খাতুন তাঁর মেজ ছেলের সঙ্গে রাজধানীর মিরপুরে থাকেন। নিজের জমানো পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখেছেন। মাসে যা সুদ আসত, তা দিয়ে স্বামীর জন্য টুকটাক খরচ করতেন, বাকিটা ব্যয় করতেন দুই নাতি ও এক নাতনির পেছনে। আবার সুযোগ পেলে বছরে একবার গ্রামেও কিছু টাকা পাঠাতেন আত্মীয়দের সহায়তার জন্য।

তবে এখন যা সুদ পাচ্ছেন, তা দিয়ে স্বামীর খরচ মেটাতে পারছেন। তবে নাতি-নাতনিকে কিছুই কিনে দিতে পারছেন না। আর গ্রামে টাকা পাঠানোর কথা ভুলেই যাচ্ছেন। আর কোনো দিন পারবেন কি না, তা-ও ভাবতে পারছেন না।

রিজিয়া খাতুন বলছিলেন, ‘এখন সব মাশুল ও কর কাটার পর প্রতি মাসে ২ হাজার ১৫৫ টাকা পাই, যা দিয়ে জীবন চালানো আসলেই কঠিন। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সঞ্চয়পত্রে রাখার চিন্তা করছি।’

রিজিয়া খাতুনের মতো ব্যাংক সুদের ওপর নির্ভরশীল সবার পরিস্থিতি একই। মানুষ এখন ব্যাংকে আমানত রেখে যে সুদ পাচ্ছেন, তা আর ঘরে আনতে পারছেন না। কারণ, এর চেয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে বেশি। সহজ করে বললে, ব্যাংকে টাকা রেখে বছরে যে সুদ পাওয়া যায়, তার চেয়ে মূল্যস্ফীতি এখন বেশি। যাঁদের জমা টাকার পরিমাণ যত কম, তাঁরাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ নিয়ে বলেন, ঋণের সুদহার নির্দিষ্ট করে দেওয়ায় ব্যাংকগুলো আমানতে বেশি সুদ দিতে পারছে না। এ জন্য যাঁরা সুদের ওপর নির্ভরশীল, তাঁদের অনেকেই অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। দেশের শেয়ারবাজারের ওপর খুব বেশি মানুষ নির্ভর করছেন না। আবার বন্ড বাজারও সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। তাই এখনো ভালো সুদের জন্য সঞ্চয়পত্রই মূল ভরসা।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব