আমরা মানুষের সফলতা দেখি, তাতে ঈর্ষান্বিত হই। কিন্তু তার পেছনে কাটানো কষ্ট আর পরিশ্রম করতে বেশিরভাগই রাজি হই না। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে গুগলের প্রিন্সিপ্যাল প্রকৌশলী এবং পরিচালক জাহিদ সবুর দেখেছেন জীবনের উত্থান পতন সেই কিশোর বয়সেই।
এক শিক্ষক দম্পতির পরিবারে জন্ম নেয়া জাহিদ সবুর সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন মাত্র পনের বছর বয়সে। মানুষের কোন কষ্টই আসলে কষ্ট না, যতক্ষণ কেউ বেঁচে থাকার মৌলিক বিষয়গুলো- খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান নিয়ে কষ্ট করে। জাহিদ সে কষ্ট করেছেন।
জীবনের সেই বয়সে এই ধরনের কঠিন সময় বেশিরভাগ কিশোরকেই করে তুলে পথভ্রষ্ট। জাহিদ সবুর শুধু সেই বয়সে নিজের কম্পিউটারের ব্যবসা শুরুর মাধ্যমে পরিবারকে রক্ষাই করেননি- আরো ভালোভাবে করার প্রত্যয়ে মাত্র ও’লেভেল সমাপ্ত করেই ভর্তি হয়ে যান কম্পিউটার প্রকৌশলের স্নাতকে।
দ্বিতীয় সেমিস্টার থেকে শুধু বৃত্তি নিয়েই এগিয়ে যান নি- ডিস্টিংশনের সঙ্গে পাশ করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয়েন করেন গুগলে, পিএইচডির বৃত্তিতে বিদায় জানিয়ে।
তিনি এমন একটি সময়ে গুগলে জয়েন করেন যখন এখানে চাকরি করার কথা বাংলাদেশে কেউ ভাবতেই পারেনি। তবে যিনি কখনোই গৎবাঁধা নিয়মে চলেননি – তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন কিছু ছিল না।
উন্নত বিশ্বের বৃহৎ পরিসরে বাঙালিদের পরিচিতি একেবারেই না থাকায়, মি. সবুর জন্ম দেন অনেকের আগ্রহের। তিনি দেখতে ভারতীয়দের মতো হলেও – কোথায় যেন ভিন্নতা। সেই ভিন্নতাকে গর্বের সঙ্গে আলোকিত করে এগিয়ে যান তিনি।
প্রায় দেড়শ’র মতো প্রকৌশলী বর্তমানে গুগলে তার অধীনে কর্মরত যার মধ্যে প্রায় ৩০-৩৫ ভিন্ন জাতীয়। এই সবার সঙ্গে মিশে তাদের জানতে তিনি চেষ্টা করেন। চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় সুইজারল্যান্ডে কাটালেও খেলাধুলার প্রতি তার চিরন্তন ভালোবাসা তাকে উৎসাহিত করে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হতে। তা সে পাহাড় বেয়ে উঠা হোক বা বাইসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়া।
”উন্নত বিশ্বে বিশেষ করে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেহেতু বিভিন্ন দেশীয় মানুষ কাজ করে, তাই নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি সাংস্কৃতিক ভাবে সবার সঙ্গে মিশতে পারবে কি না তা খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
”দিন শেষে কাজের সাফল্য নির্ভর করে টিমের সাফল্যের উপর। আর একটি টিম তখনি সফল হতে পারে যখন প্রতিটি মানুষ নিজেদের ভিন্নতাকে দূরে রেখে একই পর্যায়ে এসে এক হতে পারে,” তিনি বলেন।
জীবনের অনেক চড়াই উতরাই দেখেছেন বলেই হয়ত, হাজারো ব্যস্ততার মধ্যেও আজকের এই সাফল্যের সময়েও সাধারণ মানুষের পাশে তাকে পাওয়া যায়। অনলাইনে সবসময়ই তিনি তার অভিজ্ঞতাকে সবার সঙ্গে শেয়ার করে চলেছেন – যদি অন্তত একজনেরও তাতে উপকার হয়। গড়পড়তার একজন পেশাজীবী হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া হয়ত খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। কিন্তু খুব ভালো অবস্থানে যেতে মানুষ হিসেবে খাঁটি হওয়া খুব বেশি প্রয়োজন- এমনটিই মনে করেন জাহিদ সবুর।