সামরিক সক্ষমতার দিকে থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর অন্যতম ইরান। তবে শক্তিশালী দেশের তালিকায় থাকলেও একটি বড় দুর্বলতা ছিল তার। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র থাকলেও ইরানের হাতে ছিল না কোনো শক্তিশালী যুদ্ধবিনান। তবে এবার সেই দুর্বলতাও কাটিয়ে উঠছে দেশটি। জানা গেছে, ইরান ইতোমধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ভয়ংকর সু-৩৫ ও সু-৩০ যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে!
গত জানুয়ারিতেই ইরানের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেন, তাদের বহরে রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক সু-৩৫ যুদ্ধবিমান যুক্ত হয়েছে। অবশ্য হাতে পেলেও এসব বিমান এখনো প্রকাশ্যে আনেনি তেহরান। এমনকি বিমানবাহিনীর কোনো এয়ারশো-তে ও এটা দেখা যায়নি। তবে এবার সেই অপেক্ষারও অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
জানা গেছে, চলতি মাসের ১৯ তারিখে অত্যাধুনিক এসব যুদ্ধবিমানগুলো প্রকাশ্যে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছে তেহরান। ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’ নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে দাবি করা হয়েছে, ইরান তার বহুল প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিমানগুলোর উন্মোচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ২০ মার্চ পারস্যের নববর্ষ উদ্যাপনের আগের দিন নিজের সক্ষমতার জানান দিতে চায় ইরান। নওরোজ নামে পরিচিত এ নববর্ষকে আশা, সমৃদ্ধি এবং নতুন সূচনার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
খবরে বলা হয়, রাশিয়ার সঙ্গে কয়েক মাস আগে ২০ বছরের চুক্তি সই করে ইরান। এতে দুই দেশের সামরিক সম্পর্ক আরও জোরদার হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার অত্যাধুনিক সুখোই-35 যুদ্ধবিমান হস্তগত হয়েছে ইরানের। ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কেন্দ্রীয় সদরপ্তরের উপসমন্বয়ক আলি শাদমানি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে ঠিক কতগুলো বিমান ইরান হাতে পেয়েছে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি।
ইরানের এই কর্মকর্তা জানান, রাশিয়ার সঙ্গে এই বিমানের প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়েও চুক্তি হয়েছে। আগামী দিনে সুখোই-35 ও সুখোই-30 যুদ্ধবিমান ইরানেই উৎপাদন করা হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো তৈরি করে দেবে রাশিয়া। এর আগেও খবর বের হয়, ইরান এই যুদ্ধবিমান হাতে পেয়েছে তবে ইরান অফিসিয়ালি এবারই প্রথম নিশ্চিত করল।
রাশিয়ার তৈরি অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমান হাতে পাওয়ায় ইরানের সামরিক সক্ষমতা এক লাফে অনেকগুণ বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এমনকি ইরান এখন ইসরায়েলের মাটিতেও বিমান হামলা চালাতে সক্ষম হবে।
ইরান থেকে যতবার সরাসরি ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়েছে, প্রতিবার দেশটির ভরসা ছিল মিসাইল। পাল্টা ইসরায়েল জবাব দিয়েছে বিমান হামলা চালিয়ে। তবে এবার ইরানের সেই দুর্বলতার অবসান ঘটছে। আলি শাদমানির ভাষায়, যদি শত্রুরা বোকার মতো আচরণ করে, তাহলে আমাদের মিসাইলের আঘাতের তেতো স্বাদ পাবে। তাদের অধিকৃত কোনো অঞ্চলই আর নিরাপদ থাকবে না।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান কিনতে মস্কো-তেহরান চুক্তি চূড়ান্ত করেছে। ওই চুক্তি সম্পাদনের এক বছর আগেই সুখোই-35 যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল ইরান। দেশটির কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বারবার জানিয়েছিলেন, রাশিয়া বেশ কিছু সুখোই-35 বিক্রি করবে।
গেল ২০০৭ সাল থেকেই রাশিয়ার অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানে নজর ছিল ইরানের। তখন এসইউ-30MK কিনতে চেয়েছিলেন আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। কিন্তু জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ও রুশ কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় সম্ভাব্য সেই চুক্তি ভেস্তে চায়। পরে ২০১৫ সালে নতুন করে এই আলোচনা শুরু হলেও সেবারও এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
ইরানের বিমানবাহিনীর বহরে রয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মডেলের যুদ্ধবিমান। তাই দেশটি অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পেতে মরিয়া হয়ে ছিল। ইরানের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে সেই যুদ্ধবিমান নিয়ে পাশে এসে দাঁড়াল রাশিয়া।