অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বৃহস্পতিবার জানিয়েছিলেন, প্রণোদনা ঋণের অর্থ শেয়ারবাজারে গেছে কি না, তা যাচাই করে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরের বৈঠকে জবাব দেবেন। পরের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় আজ বুধবার বিকেলে।
সাংবাদিকেরা বিষয়টি আজ মনে করিয়ে দিলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রণোদনার টাকা শেয়ারবাজারে গেছে কি না, তা আমি জানতে পারিনি। আমি তো এ-ও বলেছিলাম, আপনারা এ ব্যাপারে কিছু জেনে থাকলে আমাকে জানাবেন।’
অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেন, শেয়ারবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ গেছে। প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) একটি অংশও শেয়ারবাজারে অর্থ গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার ‘সাম্প্রতিক মুদ্রানীতি কি অর্থনীতির বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে, সিপিডির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, বাজারে এখন অধিক তারল্য আছে। প্রণোদনার টাকা উৎপাদনশীল খাতে না গিয়ে শেয়ারবাজারে যাচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখার দরকার। গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, প্রণোদনার অর্থ শেয়ারবাজারে যাচ্ছে। সিপিডির মতে, করোনার অভিঘাতে অর্থনীতির এই অবস্থায় শেয়ারবাজার চাঙা হওয়ার কারণ নেই।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল বলেন, ‘ইদানীং সন্দেহজনক স্টকে বিনিয়োগ বাড়ছে। এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন। কোথাও “ফাউল প্লে” হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, নাকি শেয়ারের দাম বাড়িয়ে টাকা বানানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, তা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কাজ করতে পারে।’
প্রবাসী আয় নিয়ে সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল বলেন, করোনার সময়ে বিভিন্ন পরিবারের আয় কমেছে, তাদের সহায়তায় বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় আসছে। ২ শতাংশ প্রণোদনাও কাজ করছে। প্রবাসী আয়ের টাকা বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা উচিত।
অর্থমন্ত্রীর কাছে আজ প্রশ্ন ছিল, প্রণোদনার অর্থ শেয়ারবাজারে যাচ্ছে কি না, তার নজরদারি দরকার বলে সিপিডি সুপারিশ করেছে। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীর মত কী?
জবাবে সিপিডিকে উদ্দেশ্য করে প্রবাসী আয় নিয়ে কথা বললেও প্রণোদনা ঋণের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘প্রবাসী আয় বৈধ পথে আসুক, এটা আমরা চাই। এদের কোথায় আপত্তি জানি না। অর্থমন্ত্রীর প্রশ্ন, এতে সিপিডির বলার কী আছে? নিয়মনীতির মাধ্যমে অর্থ এলে তো দেশের জন্য ভালো।’
বাংলাদেশ ব্যাংক ২৫ জুলাই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের দেওয়া চিঠিতে বলেছে, সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনার ঋণ যথাযথ খাতে ব্যবহার না হয়ে কিছু অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ ঋণ দিয়ে ঋণগ্রহীতা অন্য ঋণের দায় সমন্বয় করছেন।
জানা গেছে, কেউ কেউ কম সুদের ঋণ নিয়ে অন্য ব্যাংকের ঋণ শোধ করেছেন। আবার কেউ কেউ কম সুদের ঋণের টাকা দিয়ে বেশি মুনাফা করতে শেয়ারবাজারে খাটাচ্ছেন—কেউ কেউ কিনেছেন জমি-ফ্ল্যাট। অথচ কারখানাগুলোর দৈনন্দিন খরচ মেটাতে চলতি মূলধন হিসেবে এসব ঋণ দেওয়া হয়েছিল।
আবুল খায়ের, এস আলম, বিএসআরএম, বসুন্ধরা, প্রাণ, সিটি, কেএসআরএম, এসিআই, জিপিএইচ, নাভানা, বেক্সিমকো, জাবের অ্যান্ড জুবায়ের, স্কয়ার ও থারমেক্স—এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা স্বল্প সুদের প্রণোদনা ঋণ নিয়েছে বলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সূত্রে জানা গেছে।