‘টুইটার কিলার’ নামে পরিচিতি পাওয়া এক কুখ্যাত জাপানি সিরিয়াল কিলারকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন টোকিও’র আদালত। মঙ্গলবার (১৫ ডিসেম্বর) এ সিদ্ধান্ত দেন আদালত। তাকাহিরো শিরাইশি নামে এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে রয়েছে নয়টি খুনের অভিযোগ।
৩০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আট নারী এবং এক ব্যক্তিকে খুন করেছেন। তার হাতে খুন হওয়া সবার সঙ্গেই তিনি অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিলেন।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে জানা যায়, যে নারীদের হত্যা করেছেন তাদের সবাইকে তিনি যৌন নির্যাতন করেছিলেন। এদিকে তাকাহিরোর উকিল দাবি করেছেন তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ঠিক হয়নি। কারণ, তার মক্কেল তাদেরকেই হত্যা করেছেন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আত্মহত্যার কথা বলেছিলেন এবং মৃত্যুর ব্যাপারেও তাদের সম্মতি ছিল।
জাপানের জাতীয় সংবাদমাধ্যম এনএইচের বরাতে জানা যায়, বিচারক নাউকুনি ইয়ানো বলেন, মৃতদের কারোই মৃত্যুর ব্যাপারে কোনো সম্মতি ছিল না। এটা গভীর দুঃখের ব্যাপার যে ৯ জনের জীবন কেড়ে নেওয়া হলো। তাদের মর্যাদা মাটিতে মিশে গেল। তিনি এই সিরিয়াল খুনের ঘটনাকে ইতিহাসের চরম বিদ্বেষপূর্ণ একটি ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
শিরাইশির হাতে খুন হওয়া ২৫ বছর বয়সী এক নারীর বাবা বলেন, শিরাইশি মরে গেলেও তাকে ক্ষমা করব না। আমি যখনই আমার মেয়ের বয়সী কাউকে দেখি তাকে আমার নিজের মেয়ে বলে ভ্রম হয়। এই কষ্টটা কোনোদিন যাবে না। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দেন।
জাপান টাইমস জানায়, ২০১৭ সালে শিরাইশির বাসার সামনে এক নারকীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয় পুলিশ। ২৪০ টিরও বেশি হাড় পাওয়া যায় তার বাসা থেকে। বিভিন্ন বক্সে এসব হাড় রেখেছিলেন তিনি। এছাড়া বিড়ালের মলের সঙ্গে তিনি এই হাড়গুলো লুকিয়ে রেখেছিলেন যেন কেউ খোঁজ না পান।
তার টুইটার প্রফাইলটিও বেশ রহস্যে ঘেরা। একটি মাঙ্গা (জাপানি অ্যানিমেশন) চরিত্র যার গলার এবং কোমরে কাটা দাগ আছে এমন ছবি ছিল সেখানে। এছাড়া তার নিজের বিবরণীতে লেখা ছিল, ‘যারা সত্যিই কষ্টে আছে আমি সেসব মানুষকে সাহায্য করতে চাই।’ প্রফাইলে যে নামটি তিনি ব্যবহার করেছে তার অনুবাদ ‘জল্লাদ’।
শিরাইশি তার টুইটারে লিখেছিলেন, সমাজে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে এখনও ভুগছে। তাদের কথা কোনো সংবাদে আসে না। আমাকে যেকোনো সময় মেসেজ করুন।
আদালতে শিরাইশির মৃত্যুদণ্ড যখন ঘোষণা করা হচ্ছিল তখন উপস্থিত ছিল ৪৩৫ জন। আদালতে জনগণের পক্ষ থেকে বসার জন্য মাত্র ১৬ টি সিট থাকা সত্ত্বেও শিরাইশিকে দেখবার জন্য এমন ভিড় হয় সেখানে।
২০১৭ সালে প্রথম খুন করা নারীর সঙ্গে টুইটারে পরিচিত হন তিনি। এরপর তাকে আত্মহত্যার ব্যাপারে সাহায্যও করেন। পরে তার প্রেমিককেও জেনে ফেলার কারণে খুন করেন তিনি। ঠিক একইরকম উপায়ে সে অন্যান্য আরও সাত নারীকে খুন করেন।