পুলিশকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা ও অপরাধ দমনে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন এ উদ্যোগের আওতায় ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলার ৯৬ থানা এলাকার মসজিদগুলোয় প্রতি শুক্রবার জুমায় খুতবার আগে পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে।
গত ১ মার্চ রেঞ্জ অফিস থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা জারির পর ৫ মার্চ থেকে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গত দুই শুক্রবার (৫ ও ১২ মার্চ) বিভিন্ন থানা এলাকার প্রায় ৭০০ মসজিদে পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে সব মসজিদেই পুলিশের পক্ষ থেকে অপরাধ তৎপরতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া হবে। মসজিদে মসজিদে গিয়ে যারা বক্তব্য দিচ্ছেন তারা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সার্কেল এসপি, ওসি, পুলিশ পরিদর্শক এবং এসআই পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্যে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ এবং সামাজিক অবক্ষয় দূর করাসহ অপরাধ তৎপরতা বন্ধে নানা কর্মকৌশলের কথা উঠে আসছে। পাশাপাশি পুলিশি হয়রানি বন্ধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হচ্ছে। পুলিশের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও মসজিদ-সংশ্লিষ্টরা। মসজিদের পাশাপাশি বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে প্রতিদিন এ ধরনের কর্মসূচি পালনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
পুলিশ অফিসাররা মসজিদে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকাসক্তদের বিষয়ে থানাকে অবহিত করতে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করছেন। কিশোর অপরাধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে। মসজিদে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা যেসব নির্দেশনা দিচ্ছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছেÑকিশোর অপরাধীদের বিষয়ে কারও কাছে কোনো ধরনের তথ্য থাকলে সঙ্গে সঙ্গে থানা পুলিশকে জানানো। নারী নির্যাতন, বাল্যবিয়ে ও ইভটিজিং বন্ধে সবাইকে সচেতন করা। থানায় নারী ও শিশু ডেস্ক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি সবাইকে অবহিত করা। থানায় ওসির কাছে যেতে কোনো মাধ্যম বা দালালের প্রয়োজন নেই বিষয়টি এলাকাবাসীকে জানানো। এ ছাড়া পুলিশের অধীনে পরিচালিত জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর কার্যক্রম সম্পর্কে সবাইকে জানাতে হবে।
বক্তব্যের বিষয়বস্তুতে বলা হয়েছে, ভাড়াটিয়াদের তথ্য যেন থানা পুলিশকে জানানো হয় সে বিষয়ে এলাকাবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। কোনো পুলিশ সদস্যদের মাধ্যমে কেউ হয়রানি হলে তা যেন তাৎক্ষণিক ওসি এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাকে জানানো হয়। প্রবাসীর পরিবারের সদস্যরা কোনো সমস্যায় পড়লে পুলিশ যেন অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তা সমাধানের চেষ্টা করে।
টুঙ্গিপাড়া গিমাডাঙ্গা দারুসসালাম জামে মসজিদের সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান সামাজিক বাস্তবতায় পুলিশের এ নতুন উদ্যোগ অবশ্যই একটি ভালো দিক। সমাজ থেকে অপকর্ম দূর হবে।
শ্রীপুর গিলারচাল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মসজিদের জুমার খুতবার আগে শ্রীপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) বক্তব্য দিয়েছেন। মসজিদ যেন কোনো দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ব্যবহৃত না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
এ বিষয়ে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জিহাদুল কবির বলেন, বর্তমান আইজিপির ভিশন অনুযায়ী পুলিশই হবে জনগণের প্রথম ভরসার স্থল। দুর্নীতিমুক্ত পুলিশ সেবা এবং শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা বাস্তবায়ন হলে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়বে।