সরকারগুলোর পরনির্ভরশীলতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের চিন্তা হলো স্বাবলম্বী হয়ে আত্মমর্যাদা নিয়ে চলা। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত মানুষকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের নিজের পায়ে চলতে হবে। নিজেদের অর্থায়নে কাজ করতে হবে। সেজন্য বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল গঠন করলাম।
সোমবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল’ এর উদ্বোধন এবং এই তহবিল থেকে ‘পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং’ স্কিমে অর্থায়নের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেতে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে নিজেদের নিজের পায়ে চলতে হবে। এ জন্য অন্যের কাছে হাত না পেতে নিজেরা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্থায়ন করবো। দেশি-বিদেশি যারাই বিনিয়োগ করতে আসুক, আমরা নিজেরা অর্থায়ন করবো। বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রাথমিক অর্থায়ন করা হবে।
অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল, নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বক্তৃতা করেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। এ সময় আমরা অনেককে হারিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে এই করোনায় আমরা আরেকটি বিষয় দেখতে পাচ্ছি, আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রিজার্ভের টাকা কীভাবে উন্নয়নে ব্যয় করতে পারি, সেটাই চিন্তা করছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বার বার অন্যের কাছে হাত পাতা, আর ধার না করে নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেদের অবকাঠোমো উন্নয়ন করা এবং যারা বিনিয়োগ করতে আসবে তাদের ঋণ নেওয়ার বিষয়টি আমরা নিজেদের অর্থ থেকে ব্যয় করতে পারি।
তিনি বলেন, ‘তাতে দেশেরও লাভ, আমাদেরও আত্মবিশ্বাস জন্মাবে। আমরা যে পারি, বিশ্বের কাছে তা দেখাতে পারি।’
দুর্যোগ-দুর্বিপাকের দেশ বিধায় যে কোনো সংকটের জন্য প্রস্তুত থাকার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ৬ মাসের আমদানির টাকা রাখতে হবে। যে কোনো সঙ্কটে খাদ্য ক্রয় যেন করতে পারি। ছয় মাসের টাকা রিজার্ভে রেখে বাকি টাকা বিনিয়োগ করতে পারি। এজন্য আমরা নিজস্ব তহবিল গঠন করার চিন্তা করেছি। এ থেকে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিতে পারবে। আর অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করবো।’
তার নিজস্ব উদ্যোগেই পায়রা বন্দর প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন ‘পায়রা বন্দর আমি নিজেই করছি। মংলা বন্দর চালু করেছি। মহেশখালীর মাতারবাড়ি বন্দর তৈরি হয়ে গেছে। সেটা আরো উন্নত হবে। আমাদের একটা গভীর সমুদ্র বন্দরও করতে হবে।’
তিনি বলেন, ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কতগুলো সুবিধা রয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানকে আমাদের বন্দরগুলো ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছি। আরো অনেক দেশও ব্যবহার করতে পারবে।’
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমাদের অত্যন্ত আনন্দের দিন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে নিজেদের অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলাম। রামনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর মাধ্যমে আমাদের উন্নয়নের ছোঁয়া সারাদেশে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন তখনই হবে, দেশকে যখন চিনতে পারবে, ভালোবাসতে পারবে। চিন্তা চেতনায় বিষয়টি আসবে। দেশটি সবসময় গণতান্ত্রিক ধারায় থাকেনি। তারপরও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। আওয়ামী লীগ ছাড়া যারাই ক্ষমতায় আসছে, তাদের মাথায় ছিল অন্যের কাছে হাত পাতা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, এটা তাদের মাথায় ছিল না।’
শেখ হাসিনা তার উন্নয়নের ম্যাজিক সম্পর্কে বলেন, ‘আমি বলি, এটা কোনো ম্যাজিক নয়। ম্যাজিক হচ্ছে, দেশপ্রেম। দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ। আমার চিন্তা দেশের মানুষকে দু’পায়ে দাঁড় করিয়ে তাদের স্বাবলম্বী করে তোলা।’