বিয়ের আগে পরে সৌদি প্রবাসী ব্যবসায়ী কামরুল হাসানের কাছ থেকে মডেল রোমানা ইসলাম স্বর্ণা হাতিয়ে নেন প্রায় দুই কোটি টাকা। নানা কৌশলে তিনি এসব টাকা আত্মসাৎ করেন। পরে স্বার্থ উদ্ধারের পর ওই প্রবাসীকে তালাক দেন এই অভিনেত্রী।
এ ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে। ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়ের পর স্বর্ণা, তার মা, ছেলে, ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী প্রবাসী কামরুলের কাছ থেকে টাকা নেওয়া শুরু করে।
‘সে যখন বিদেশ থেকে আসে তখন এই প্রতারক চক্র বাসায় নিয়ে উলঙ্গ করে তার ছবি তোলে। আর টাকা না দিলে সেই ছবি ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। প্রবাসীর কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ায় চক্রটিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৮ সালে সৌদি প্রবাসী কামরুল হাসানের সঙ্গে স্বর্ণার পরিচয় হয়। পরে ফেসবুকে কথোপকথন। এরপর থেকেই টাকা চাওয়া শুরু করে সে।
শুরুতে চলচ্চিত্র ও নাট্যজগতের রুগ্ণ দশার কথা বলে অর্থনৈতিক অসহায়ত্ব দেখিয়ে টাকা চায়। এরপর প্রশাসনের ও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে দেবে বলে টাকা চায়।
অর্থ চায় সন্তানকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টাকার অভাবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করতে পারছে না-এমন মানবিক কারণ দেখিয়ে। উবারে গাড়ি দিয়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানোর কথা বলেও চাওয়া হয় অর্থ।
২০১৮ সালের নভেম্বরে ইউসিবিএল ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় রোমানার হিসাবে প্রথমে আড়াই লাখ এবং পরে আট লাখ টাকা পাঠান প্রবাসী। কামরুলের প্রবাসী বন্ধু রিপন চৌকিদারের ডেমরার বাসা থেকে নেন ১২ লাখ টাকা। এই টাকা নিয়ে কেনেন গাড়ি। এরপর ফ্ল্যাট ব্যবসার কথা বলে স্বর্ণা এক কোটি টাকা চায়।
এরপর সে কামরুলের বন্ধু যাত্রাবাড়ীর ফার্নিচার ব্যবসায়ী উজ্জ্বল শরীফের কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা, মামা তোফায়েল আহম্মেদ বাবুল গোমস্তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেয়।
ইউসিবিএল ধানমন্ডি শাখায় রোমানা ও তার মা আশরাফী আক্তার শেইলীর হিসাবে দফায় দফায় সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সাতবার নেন।
একইভাবে বড় অঙ্কের অর্থ নিতে থাকেন ছোট ভাই নাহিদ হাসানার রেমির ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের উত্তরা শাখার হিসাবে। এভাবে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ নেন ৬৬ লাখ আট হাজার টাকা।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, কামরুলের টাকায় কেনা গাড়ি দেখতে তাকে একদিন বাসায় ডাকেন রোমানা।
এরপর ব্ল্যাকমেইল করে নাশতার সঙ্গে চেতনানাশক মিশিয়ে উলঙ্গ ও অর্ধ-উলঙ্গ ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে ছবি তোলে রোমানা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ধর্ষণ মামলার হুমকি ও সামাজিক মর্যাদা নষ্টের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয় প্রবাসী কামরুলকে। স্ট্যাম্পে নেওয়া হয় স্বাক্ষর। নিকাহনামায় নিজেকে বিধবা হিসাবে উল্লেখ করে রোমানা।
ভুক্তভোগী জানান, বিয়ের পর তার জীবনটা বিষিয়ে ওঠে। ১০ লাখ টাকা দেনমোহরের পাশাপাশি নেওয়া হয় ৩৩ ভরি স্বর্ণ। এরপর তার চাহিদা বাড়তেই থাকে। কেনেন চার লাখ টাকা মূল্যের একটি ঘড়ি, দুটি নতুন মডেলের আইফোনসহ বিভিন্ন পণ্য।
কামরুল হাসান জানান, ২০১৯ সালের মার্চে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের পর কামরুল সৌদি আরব চলে যান। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। স্বর্ণাকে ফোন করলে সে রিসিভ করছিল না।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে স্বর্ণার বাসায় যান তিনি। তখন সে বাসায় ফেরেনি। রাত ২টা ৪০ মিনিটে বাসায় ফিরলে স্বর্ণা জানিয়ে দেয়, তাকে অনেক আগেই সে তালাক দিয়েছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় তাকে।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার স্বর্ণার বিরুদ্ধে কামরুল মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সন্ধ্যায় লালমাটিয়া ডি-ব্লক-এর একটি বাসা থেকে স্বর্ণাকে গ্রেফতার করা হয়।