গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে রোকসানা খাতুন (২৩) নামে এক গৃহবধূকে চার দিনের নবজাতকসহ তাড়িয়ে দিয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কন্যাশিশু জন্ম দেয়ায় তার সঙ্গে এ অমানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
এ ঘটনার পর ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ নবজাতকসহ ওই মাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। এরপরও স্বামীর ঘরে স্থান না পেয়ে বাবার বাড়িতে ঠাঁই হয়েছে গৃহবধূ রোকসানা খাতুনের।
বৃহস্পতিবার রাতে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ঘোড়ামারা গ্রামের স্বামীর বাড়ির উঠান থেকে নবজাতক ও গৃহবধূকে উদ্ধার করে পুলিশ।
রোকসানার পরিবার জানায়, এক বছর আগে ঘোড়ামারা গ্রামের মহব্বর আলীর ছেলে রাজা মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের ধনিয়ারকুড়া গ্রামের লুৎফর মিয়ার মেয়ে রোকসানা থাতুনের। রাজা মিয়া ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে।
মহাব্বর মিয়ার বাড়ির লোকজন জানান, রোকসানার স্বামী আগেও একটি বিয়ে করেছিল বছর দুয়েক আগে। তবে তাকে তালাক দিয়েছে রাজা মিয়া। ওই পক্ষের শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাজা মিয়া ও তার বাবা-মার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। সেটি এখন বিচারাধীন রয়েছে। পরে রাজা মিয়ার বাবা মহাব্বর মিয়া রোকসানার বাবা-মাকে বুঝিয়ে রোকসানার সঙ্গে রাজা মিয়ার বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
এক বছর যেতে না যেতেই রোকসানার গর্ভে সন্তান আসে। ডাক্তারি পরীক্ষায় রোকসানার কন্যাসন্তান হবে বলে জানতে পারে স্বামী রাজা মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন। এরপর রোকসানার ওপর নানা ধরনের নির্যাতন চালাতে থাকে তারা।
মারপিট থেকে শুরু করে যৌতুক দাবিসহ নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। গত সোমবার প্রসব ব্যথা উঠলে রাজা মিয়া তার স্ত্রী রোকসানাকে রংপুরের সালেহীন ক্লিনিককে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়। সেখানে সিজারিয়ানের মাধ্যমে রোকসানা একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
এদিকে রাজা মিয়া স্ত্রী রোকসানাকে ক্লিনিকে ভর্তি করে দিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ সময় রোকসানার মা ফাতেমা বেগম তার সঙ্গে ছিলেন। কোনো টাকা-পয়সা না দিয়ে রাজা মিয়া উধাও হয়ে যাওয়ায় রোকসানা ও তার পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েন। সিজারে সন্তান প্রসবের জন্য ক্লিনিকের সঙ্গে ১০ হাজার টাকা চুক্তি হয়েছিল।
টাকা দিতে না পারায় ক্লিনিক থেকে রিলিজ পাচ্ছিলেন না তারা। বাধ্য হয়ে মা ফাতেমা বেগম বাড়ি থেকে টাকার ব্যবস্থা করে মেয়েকে নিয়ে তার স্বামী রাজা মিয়ার বাড়িতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন বাড়ির সমস্ত ঘরে তালা দেয়া। একটি ঘরে তার শ্বশুর মহাব্বর মিয়া অবস্থান করছিলেন। তিনি কিছুতেই রোকসানাকে ঘরে উঠতে দিচ্ছিলেন না। এ সময় রোকসানা খাতুন বাধ্য হয়ে মোবাইল ফোনে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
কিন্তু পুলিশ আসার খবর পেয়ে শ্বশুর মহাব্বর মিয়া তার ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সব কিছু শুনে রোকসানাকে স্বামীর বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে অজ্ঞাত কারণে সেখান থেকে চলে যায়।
এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসায় ওই বাড়িতে থাকা নিরাপদ না মনে করে রোকসানার মা ফাতেমা বেগম ও দাদি লাইলী বেগম তাদের মেয়েকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। রোকসানা এখন বাবার বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ধনিয়াকুড়ায় বাবা লুৎফর রহমানের বাড়িতে অবস্থান করছেন। রোকসানা এখন সদ্যজাত সন্তান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে রোকসানা বলেন, নিজের স্বামী এভাবে তার সন্তানসহ আমাকে ফেলে রেখে পালিয়ে যাবে এটা আমি ভাবতেই পারিনি। তারা বিভিন্ন সময় আমার ওপর নির্যাতন করত আমি তা সহ্য করে স্বামীর ঘরে থেকেছি। কিন্তু এখন আমি কী করবো তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
এ ব্যাপারে সাদুল্লাপুর থানার অফিসার ইনর্চাজ (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না।
তবে থানার ওসি মাসুদ রানা বলেন, মেয়েপক্ষ যেভাবে ঘটনা বলছেন প্রকৃত ঘটনা সেরকম কিছু নয়। থানার এসআই হান্নানকে পাঠানো হয়েছিল। মেয়েটিকে তাদের বাড়ির দাওয়ায় বসে থাকতে দেখে চলে এসেছেন।