পাবনার ভাঙ্গুড়া পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টের বিষাক্ত ধোঁয়া, ধুলাবালি ও বিটুমিন পোড়ানোর দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে পৌরবাসীর। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী, পথচারী ও এলাকার বাসিন্দারা। বছরের বেশিরভাগ সময় শহরের প্রাণকেন্দ্রে এমন কর্মকাণ্ড চললেও স্থানীয় প্রশাসন রহস্যজনকজনক কারণে নীরব রয়েছে। এ অবস্থায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড, স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার একই এলাকায় হওয়ায় প্রায় এক একর উন্মুক্ত জায়গা রয়েছে। তাই পৌরশহরসহ পাশের ইউনিয়নগুলোর ৬/৭ কিলোমিটার পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ হলেই ঠিকাদাররা এই এলাকাটি নির্মাণ সামগ্রী রাখা ও বিটুমিন মিক্সিং কাজের জন্য বেছে নেয়। এতে জায়গা ইজারা বা ভাড়া দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে বাড়তি টাকা খরচ করতে হয় না। এ কারণে বছরের বেশিরভাগ সময় এলাকাটি ঠিকাদারদের নির্মাণসামগ্রীর দখলে থাকে। সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার কাজ শুরু হলেই বিটুমিন পোড়ানোসহ মিক্সিং প্লান্ট সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চালু রাখা হয়। তখন প্লান্টের বিষাক্ত ধোঁয়া, পাথরের ধুলাবালি ও বিটুমিন পোড়ানোর গন্ধে বাসস্ট্যান্ড ও সিএনজি স্ট্যান্ডের যাত্রী এবং আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগত ক্রেতারা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন। কিন্তু ঠিকাদাররা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগে পড়লেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। তাই ব্যবসায়ীরা নিজেদেরকে ধুলাবালি ও গন্ধ থেকে রক্ষা করতে নাকে কাপড় বেধে রাখেন সব সময়।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে পারভাঙ্গুড়া ইউনিয়নের পারভাঙ্গুড়া গ্রামে সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। এই কার্পেটিংয়ের নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে ভাঙ্গুড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সেখানেই বিটুমিন পোড়ানো ও মিক্সিংয়ের কাজ করা হচ্ছে। পরে মিক্সিং পাথর ট্রলিতে করে ওই গ্রামে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কয়েকদিন ধরে কাজটি করাচ্ছেন পাবনার ঠিকাদার ছাত্রলীগ নেতা রকি আহমেদ। এর আগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের কৈডাঙ্গা গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে সড়কের কার্পেটিংয়ের সময় একই স্থানে বিটুমিন পোড়ানো ও মিক্সিং প্লান্টের কাজ করে পাবনার ঠিকাদার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন। তবে কাগজ-কলমে দুইটি কাজের ঠিকাদার পাবনার শফিক ট্রেডার্স বলে জানায় উপজেলা প্রকৌশল অফিস। দিনভর বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টের ধোঁয়া ও ধুলাবালিতে বাসস্ট্যান্ড ও সিএনজি স্ট্যান্ডের যাত্রীদের পরনের পোষাক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ধোয়া ও ধুলাবালি আশপাশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উড়ে গিয়ে পড়ছে। এমনকি কালো ধোঁয়ায় শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ বিবর্ণ ও নোংরা হয়ে পড়েছে। তবে ঠিকাদার দুইজন অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং ভাঙ্গুড়ার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যতা রয়েছে বলে কেউই মুখ খুলে প্রতিবাদ করতে পারছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, বিটুমিনের ধোঁয়ায় গন্ধে ও ধুলাবালির কারণে দম বন্ধ হয়ে যায়। তাই সব সময় নাকে মুখে কাপড় দিয়ে চলতে হয়। এ অবস্থার কারণে গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতারাও ঠিকমতো আসেন না। ফলে ব্যবসায় লোকসান যাচ্ছে। কিন্তু এর প্রতিবাদ করলে এলাকায় থাকা যাবে না। এভাবে চলতে থাকলে স্থানীয় বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টের রোগী হয়ে যাবে।
সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, ধোঁয়া ও ধুলোবালিতে যাত্রীদের অসুবিধা হচ্ছে। বিশেষ করে স্ট্যান্ডে চালকদের দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণে কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু বলার নেই।
সংশ্লিষ্ট পৌরসভার কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন বলেন, দেখতে পারছি মানুষের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলা সম্ভব না। আপনারা লেখেন। দেখি কিছু হয় কিনা।
ঠিকাদার রকি আহমেদ বলেন, আশপাশে জায়গা না থাকায় সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ কাজের বিটুমিন মিক্সিংয়ের জন্য বাসস্ট্যান্ড এলাকা বেছে নেওয়া হয়। এতে কেউ নিষেধ না করায় এই এলাকায় নির্মাণসামগ্রী রেখে কাজ করছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার হালিমা খানম বলেন, জনবসতি এলাকায় বিটুমিন মিক্সিং প্লান্টের ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটে। এতে শ্বাসকষ্ট ও ত্বকের সংক্রমণ সহ নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়বে স্থানীয় বাসিন্দারা। যেটা করোনাকালীন সময়ে খুবই মারাত্মক। তাই জনবসতি এলাকায় পরিবেশ, বায়ু দূষণ মুক্ত রাখতে এমন কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত।
উপজেলা প্রকৌশল অফিস সহকারী প্রকৌশলী বাবুল আক্তার বলেন, বিটুমিন প্লান্টের ধোঁয়া ও ধুলি বালিতে মানুষের খুবই অসুবিধা হচ্ছে বুঝতে পারছি। কিন্তু এই কার্যক্রম বন্ধ করার এক্তিয়ার তাদের নিয়ে। এটা উপজেলা প্রশাসন চাইলে বন্ধ করতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, বিষয়টি নিয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।