বরগুনায় করোনার টিকা গ্রহণে আগ্রহ নেই জেলাবাসীর। টিকা গ্রহীতার হার লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক কম। এদিকে টিকার মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় আশঙ্কায় জেলা থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে তিন হাজার ১০০ ডোজ। জেলার তিনটি উপজেলা থেকে এই ডোজ পাঠানো হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। জেলায় টিকা গ্রহীতার পরিমানের তুলনায় কম হওয়ায় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় গত সোমবার (৭ মার্চ) বরগুনা থেকে তিন হাজার ১০০ ডোজ টিকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বরগুনার আমতলী থেকে দুই হাজার ডোজ, বেতাগী থেকে ৩৩০ ডোজ ও পাথরঘাটায় ৭৭০ ডোজ। অন্যদিকে আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত করোনাভাইরাসের প্রথম ডোজ টিকার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে।
যদিও বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী টিকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর আগে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে টিকা অব্যবহৃত থাকলে তা ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেননা দেশের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে এখনও টিকার চাহিদা রয়েছে তাই সমবন্টনের জন্যই টিকা ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রথম ডোজ টিকা দেওয়ার জন্য যে পরিমান টিকার প্রয়োজন তা বরগুনায় মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বরগুনার সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের সাত ফেব্রুয়ারি সারাদেশের ন্যায় বরগুনায়ও টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। টিকা কার্যক্রম শুরুর আগে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ২৪ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বরগুনা সদর উপজেলায় সাত হাজার ৩০ ডোজ, আমতলীতে সাত হাজার দুই শত ৮০, পাথরঘাটায় চার হাজার চার শত ১০, বামনায় দুই হাজার এক শত ৪০ ও বেতাগীতে তিন হাজার এক শত ৪০ ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। শুধু তালতলী উপজেলায় হাসপাতালের আন্তবিভাগীয় সেবা বন্ধ থাকায় সেই উপজেলায় কোন টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বরগুনা জেলায় এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৩৯ ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ রয়েছে ১১ হাজার ৩৪ জন ও নারী রয়েছে ছয় হাজার ২০৫ জন।
বরগুনার আমতলী উপজেলার স্থানীয় এলাকাবাসী মো. নূরুজ্জামান ফারুক জানান, করোনা টিকা নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের মাঝে এখনো সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। এখনো করোনা টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকেই ভয় পাচ্ছে। তাই করোনা টিকাগ্রহণের বিষয়ে আরো সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া জরুরি।
বর্তমানে তালতলী উপজেলার বাসিন্দাদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়। যা তালতলী থেকে ৩০-৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ফলে তালতলীর বাসিন্দাদের এত দূরে গিয়ে টিকা দেওয়ায় অনাগ্রহ দেখা দেয়। ওই উপজেলার মোট কতজন বাসিন্দা টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে এমন সু-নির্দিস্ট কোনো তথ্য নেই।
তালতলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজবিউল কবির জোমাদ্দার বলেন, তালতলী ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটিতে টিকা দেওয়ার মতো সক্ষমতা না থাকায় স্থানীয় এলাকাবাসীকে আমতলী উপজেলায় গিয়ে টিকে নিতে বলা হয়েছে। কিন্ত এতদূর গিয়ে টিকা নেওয়ায় এখানের অনেকেরই আগ্রহ নেই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, মানুষকে সচেতন করা সত্বেও করোনা টিকা নিতে চাচ্ছে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আশঙ্কায় ২০০ ভায়েল অর্থাৎ দুই হাজার মানুষের টিকার ডোজ ফেরত দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালে টিকার কোনো সংকট নেই।