গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, গায়ের রঙয়ে ভারতীয়দের মতো থাকলেও তারা সব সময় সাহেবদের মতো আচরণ করে। অনুগতদের সেজদা করে। ঠিক একই পদ্ধতিতে আজকে আধিপত্যবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। ভারত যে চক্রান্তটা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা অনেকে বুঝেছিলাম। আপনারা জানেন, মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী খালেদ মোশারেফ যুদ্ধে আহত হয়েছিল। আমরা কিন্তু সিকিম হয়ে যাব। আধিপত্যবাদ যে শুধু দেশের বাইর থেকে আসে তা না, ভেতর থেকেও আসে। আজকে পত্রিকায় আছে, ফেনী নদীর ব্রিজের ফলে বাংলাদেশের ব্যবসা বাড়বে ১৭ শতাংশ, ভারতের বাড়বে আট শতাংশ। আসল ব্যপার হচ্ছে তারা ফেনী নদীকে দখল করে নেবে। ফেনী নদীর যে চুক্তি ছিল। তারা যতটুকু পানি নেওয়ার কথা তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পানি নিয়ে যাচ্ছে। ওই নদী ছিল আমাদের নদী, সেটা এখন আন্তর্জাতিক নদী বলা হচ্ছে।
আজ বুধবার (১০ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুই বছর আগে বলেছিলেন ভারতকে সব কিছু দিয়েছি, আর কি দিব। বাংলাদেশের যতজন সচিব আছেন অধিকাংশের প্রশিক্ষণ হয়েছে ভারতে। ভারতে যখন প্রশিক্ষণ হয়, তখন ব্রেইন ওয়াশ করা হয়। ফলে ওই সচিবেরা মনে করে ভারতের স্বার্থ দেখা আমাদের দায়িত্ব। এখন মোদি আসবে বাংলাদেশে। মোদির গায়ে থুথু দিবেন না, কারণ এটা অস্বাস্থ্যকর। তাকে কালো পতাকা দেখান।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এখন কেবল বাকি আছে আমাদের পতাকার রং বদলানোর। আজকে থেকে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। মোদি তোমাকে আমরা চাই না। মোদি তুমি ফিরে যাও। যতদিন হিন্দুত্ববাদ এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিবর্তন না হয়। কিন্তু আমরা ভারতীয়দের বিরোধী না।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি একটা মহা ভুল করেছেন। ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ দিয়ে খুব ভুল কাজ করেছেন। অন্তত আপনি বলতে পারতেন তিস্তার একটা সমাধান করতে। আমাদের অন্যান্য প্রাপ্তিগুলো পূরণ করো। আমাদের পাট আছে, পাটের ওপর তারা ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছে। আমাদের পাটজাত পণ্য সেখানে যেতে পারে না।
তিনি বলেন, ভারতীয় ৫ লাখ লোক এখানে কাজ করে বিনা পাসপোর্টে। ভারতে আমাদের অনেক বড় জায়গা তারা আমাদের দিতে পারে। আমাদের আজকে আওয়াজ তুলতে হবে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। ভারত আমাদের পানি সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধান না করলে আমার বুকের ওপর দিয়ে তার চলাফেরা চলবে না। দেশে সবাই আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে। সবার মধ্যে বিশ্বাস ভারতের সমর্থন ছাড়া ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না।
ফেনী নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করতে ভারত কিভাবে রাজি করাল প্রশ্ন রেখে জাফরুল্লাহ বলেন, যুদ্ধের সময় একটা চুক্তি ছিল ভারতের সঙ্গে এখন আর নেই। ভারতীয় সেনাবাহিনী যাতে বাংলাদেশে দ্রুত প্রবেশ করতে পারে। তারা অতীততেও প্রবেশ করেছে আর ব্যবসা হলো সামনের ফ্রন্ট। আজকে আমাদের রাজনৈতিক জাগরণ না হলে, আমাদের কপালে খুবই দুঃখ আছে। আজকে সবাইকে একত্রিত হয়ে আমাদের মাথা উঁচু করে রাখার জন্য যেন আমরা সিকিম না হই। আমাদের প্রত্যেকেরই দায়িত্ব আছে ভারতের এই আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক চরিত্র হনন হচ্ছে দাবি করে জাফরুল্লাহ বলেন, এই চক্রান্তে উনার পরিবারের কিছু লোক আছে, উনার পার্টির কিছু লোক মিলে অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে। উনার সাজা স্থগিত করা হলো, তার সঙ্গে যদি সেলিমের হিসাব করেন তাহলে তফাৎ বুঝতে পারবেন। আজকে অইটাই বুঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের বিরোধিতা করলে রেহাই নেই। খালেদা জিয়ার যেদিন রায় হয় উনাকে ওইদিনই জেলে যেতে হয়েছিল। আর হাজী সেলিমের হাতে এক মাস সময় আছে।
আদিপত্য প্রতিরোধ আন্দোলন সংগঠনের উদ্যোগে মতবিনিময় সভায় রাখেন দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হারুন অর রশীদ খান, ইসলামী ঐক্যজোটের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা শওকত আমিন, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু, ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন মনি, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী শামসুর রাহমান, বাংলাদেশ মুসলিম সমাজের সভাপতি ডা. মাসুদ হোসেন,ইয়াকুব শরীফ, সভা পরিচালনা করেন আদিপত্য প্রতিরোধ আন্দোলনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামসুউদ্দীন প্রমুখ।