হতদরিদ্রদের জন্য ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচির কয়েক কোটি টাকা লোপাট করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের সাত সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে সব অভিযোগ প্রমাণিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৫ অক্টোবর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক। কিন্তু অদ্যাবধি রহস্যজনক কারণে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কারো বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা তাদের নামে লোপাট হওয়া টাকা ফেরত পেতে ও সরকারি সহায়তার এ অর্থ লোপাটকারীদের শাস্তির দাবিতে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন গত ৫ মাস ধরে। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি নানা টালবাহানায় ধামাচাপা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে পাঁকা ইউনিয়নের জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে অতি হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দকৃত কোটি কোটি টাকা কাজ না করেই লোপাট করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম মেহেদী, কাইয়ুম রেজা কায়েম, মো. রূহুল আমিন, তরিকুল ইসলাম, সুফিয়া বেগম, গোলাম মোস্তফা ও শাহনাজ বেগম।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিসি চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ইউএনও শিবগঞ্জকে তদন্তের নির্দেশ দেন। শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরেজমিনে অভিযোগ তদন্ত করে ডিসির কাছে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে পাঁকা ইউপির সাত সদস্যের বিরুদ্ধে হতদরিদ্রদের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়। তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে গত ৫ অক্টোবর সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের ডিসি স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি দেন। সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের সব নথিপত্র সংযোজন করেন। অভিযুক্ত ইউপি সদস্যরা নিজেরাই টাকা আত্মসাতের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। এসব নথিও মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ডিসি চাঁপাইনবাবগঞ্জের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী গত ২৯ নভেম্বর ফেরত চিঠি দেন। তবে সেই চিঠিতে তিনি অভিযুক্ত সাত ইউপি সদস্যদের কার বিরুদ্ধে- কে কত পরিমাণ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে তার পরিমাণ চেয়ে পাঠান। গত জানুয়ারিতে ডিসি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুনরায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও সকল নথিপত্র আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে অদ্যাবধি স্থানীয় সরকার বিভাগ কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিল আল রাব্বী বলেন, মন্ত্রণালয় যা যা জানতে চেয়েছিলেন তার সবকিছুই আমরা আবার পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা আমরা বলতে পারছি না। বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের অধীন।
তিনি আরও বলেন, আরও দুটি ইউনিয়নে অতি হতদরিদ্রদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুই ইউপি সদস্যের প্রতিবেদন অনেক পরে পাঠানো হলেও সেগুলোর বিষয়ে মন্ত্রণালয় দ্রুতই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ওই সব ইউপি সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু পাঁকা ইউনিয়নের বিষয়টি কেন কার্যকর হচ্ছে না তা বুঝতে পারছি না।
জেলা প্রশাসনের পাঠানো প্রতিবেদন ও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ পাঠানোর ৫ মাস পরও কেন মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়নি? জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউপি শাখা-১ এর সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আবু জাফর রিপন বলেন, সারা দেশের এত ইউনিয়ন। সব তথ্যই আমার মুখস্থ থাকার কথা নয়। বিষয়টি জেনে নিয়ে পরে জানানোর অনুরোধ করলেও তিনি ব্যস্ততার কথা বলে প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।