কক্সবাজারের ঈদগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুতা পায়ে শহীদদের স্মরণে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নানা মহলে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়ন শাখার যুগ্ম আহবায়ক মো. আলমগীর নামের এক নেতাসহ আরো কয়েকজন বিএনপির সহযোগী সংগঠনের কর্মীরা জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন।
এমনকি তারা শহীদ বেদীতে জুতা ও স্যান্ডেল পায়ে হাটাহাটি ও মোবাইলে ছবি ধারণ করতেও দেখা গেছে। এ রকম জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠার কয়েকজনের ছবিও ধারণ করেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। রবিবার ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে ঈদগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বেদীতে।
তাদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শহীদ মিনারে উপস্থিত ঈদগাঁও এলাকার সচেতন লোকজন। তারা এমন ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা এনে দিয়েছিলেন তাদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারে জুতা পায়ে প্রবেশ কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তারা এদের শাস্তি দাবি করেন।
ঈদগাঁও সাংগঠনিক উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন এ বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন- ‘যারা জুতা পায়ে শহীদ মিনারে উঠেছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ সতর্ক করা হবে।’
অপরদিকে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করার পর ঈদগাঁও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে থানা পুলিশ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, রিপোর্টার্স সোসাইটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ফুলও গায়েব হয়ে যায় বলে জানা গেছে। সংগঠনের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতাকর্মী অভিযোগ করে জানান, তারা প্রথম প্রহরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে যে যার মতো করে চলে যায়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে এসে দেখতে পান শহীদ বেদীতে তাদের দেয়া ফুলগুলো নেই।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, স্থানীয় কথিত কয়েকজন ছাত্রনেতা বেদী থেকে ফুল নিয়ে গেছেন। একইভাবে রাতে একটি পুষ্পমাল্য নিয়ে যান ইসলামপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহিদ মোস্তফা জানান, রাতে উক্ত যুবলীগ নেতা একটি পুষ্পমাল্য নিয়ে যেতে দেখেছেন। পর দিন সকালে সেই পুষ্পমাল্যটি বিক্রি করে দেন ইসলামপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগকে।
অভিযোগের বিষয়ে জসিম উদ্দিনের মুঠোফোনে কয়েকবার রিং দেওয়া হলেও সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ওসমান আলী মোর্শেদ জানিয়েছেন, ফুলটি মূলত ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি জাকারিয়া হিরো ঈদগাঁও বাজার থেকে কিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অর্পণ করেছিল ইসলামপুর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে ফুলটি যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিনকে তুলে দেন ইসলামপুর নিয়ে যেতে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার ডা. শামশুল হুদা শহীদ মিনারের ঘটনার বিষয়ে বলেন, ‘শহীদ মিনারে জুতা পায়ে প্রবেশ, ফুল চুরি এসব শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধা, যারা শহীদদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা নিবেদন করতে জানেন না বা করে না তারা জাতির দুষমন। এসবের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে।’