নোয়াখালীর সদর উপজেলার কাদির হানিফ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় (১৯) এক কলেজছাত্রীকে জোরপূর্বক আটক করে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে সন্ত্রাসীরা। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে গণধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে তিন যুবকের বিরুদ্ধে।
একইসঙ্গে ওই তিন যুবকের হাতে শারীরিক লাঞ্ছিত হয়েছে ছাত্রীর সহপাঠী। অশ্লীল ছবিও ধারণ করা হয়েছে তার।
ঘটনায় নির্যাতিতা ওই ছাত্রী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করলেও এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে অভিযুক্ত তিন আসামি। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মামলার ৩নং আসামি রায়হান বিদেশ গমনের চেষ্টা করার খবর পেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের মাধ্যমে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রোববার সকালে সরজমিনে নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, একটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীর গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে কৃষ্ণরামপুর গ্রামে তাদের বাড়ির গেটের সামনে তার সহপাঠীর (২০) সঙ্গে পরীক্ষার সাজেশনের বিষয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় বাড়িতে তার ছোট ভাই থাকলেও মা-বাবা আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন।
এশার নামাজের আজান হওয়ায় তার ছোট ভাই বাড়ির পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। এর কিছুক্ষণ পর পুলক মজুমদার, আকবর হোসেন ও রায়হান উদ্দিন নামে তিন বখাটে এসে ওই ছাত্রীদ্বয়ের সঙ্গে টানা হেঁচড়া শুরু করে। এক পর্যায়ে ওই তিনজন তাদের ধাক্কা দিয়ে ছাত্রীর ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়।
নির্যাতিতা ছাত্রীর অভিযোগ, ঘরের ভিতরে নিয়ে যাওয়ার পর রায়হান তার সহপাঠীকে তাদের রান্নার কক্ষে ও পুলক এবং আকবর ঘরের ভিতরের কক্ষে তাকে নিয়ে যায়। ওই কক্ষে গিয়ে প্রথমে তাকে এলোপাথাড়ি মারধর ও পরে জামা কাপড় খুলে বিবস্ত্র করে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে।
এ সময় পুলক ও আকবর তার কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে অন্যথায় তার এসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। কিন্তু ওই ছাত্রী টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পুলক ও আকবর তাকে গণধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এরইমধ্যে ছাত্রীর গোংরানিতে পাশের সড়ক দিয়ে যাওয়া লোকজন এগিয়ে আসলে অভিযুক্ত তিনজন পালিয়ে যায়।
পরে এ ঘটনায় নির্যাতিতা বাদী হয়ে শনিবার রাতে পুলক, আকবর ও রায়হানকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সুধারাম মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর সন্ত্রাসী পুলক মজুমদারের প্রভাবশালী বড় ভাই সুজন মজুমদার রাত ১২টার দিকে তাদের বাড়িতে এসে জোরপূর্বক নির্যাতিতাকে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের একজনের সঙ্গে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর থেকে আসামিরা বিভিন্নভাবে ওই ছাত্রী ও তার পরিবারের লোকজনকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
সুধারাম মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন বলেন, ওই ছাত্রীর দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত তিন আসামিকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে। অপরদিকে মামলার ৩নং আসামি বিদেশ গমনের সংবাদ পেয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের সহযোগিতায় তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।