চলতি সপ্তাহে সিরিয়ার কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন এক ইসরায়েলি নারী। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। ওই নারী মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই গুঞ্জন ওঠে, ইসরায়েল-সিরিয়ার মধ্যে সরাসরি বন্দিবিনিময় চুক্তির ফসল এটি। ইসরায়েল সরকার অবশ্য জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার সিরিয়ার দুই রাখালকে ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ওই নারীকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে।
তবে দুই শত্রু রাষ্ট্র, যারা বহুবার একে অপরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়েছে, যাদের মধ্যে কখনোই কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল না- তাদের মধ্যে হঠাৎ এত সহজে বন্দিবিনিময় হওয়াটা কিছুটা অস্বাভাবিক মনে হতে পারে। হয়েছেও তেমনটাই। গোপনে সিরিয়া সরকারকে ‘ঘুষ’ দিয়ে এই যোগাযোগ তৈরি করেছে ইসরায়েল।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপদে থাকা সিরিয়াকে গোপনে ভ্যাকসিন কিনে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই সমঝোতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চুক্তি অনুসারে, সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারের হাতে স্পুটনিক ৫ ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য রাশিয়াকে অর্থ দেবে ইসরায়েল। রুশরাই এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করেছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যে তার ৯২ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেককেই অন্তত এক ডোজ করে ভ্যাকসিন দিয়েছে। বিপরীতে, গৃহযুদ্ধের ১১তম বছরে পা দেওয়া সিরিয়া এখনও সেই কার্যক্রম শুরুই করতে পারেনি।
সিরিয়াকে ভ্যাকসিন কিনে দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইসরায়েল সরকার। গত শনিবার এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। শুধু বলেছেন, সিরিয়ায় ইসরায়েল কোনো ভ্যাকসিন পাঠায়নি।
নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা ওই নারীকে ফিরিয়ে এনেছি, আমি এতেই খুশি।’ এসময় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ধন্যবাদ জানান তিনি। এর পরপরই বলেন, ‘আমি আর কিছু বলব না।’
সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের দ্বন্দ্ব বহু পুরোনো। গোলান মালভূমি নিয়ে এখনও তাদের মধ্যে বিরোধ চলছে। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে সিরিয়ার কাছ থেকে অঞ্চলটির দখল কেড়ে নেয় ইসরায়েল। সেটি এখনও তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
এ অবস্থায় শত্রু দেশকে ভ্যাকসিন কিনে দিয়ে ইসরায়েলিদের সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, ভ্যাকসিন বৈশ্বিক কূটনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ধনী ও দরিদ্র দেশের মধ্যে বৈষম্যও স্পষ্ট করে তুলেছে সেটি।
সিরিয়া-ইসরায়েলের মধ্যে এধরনের চুক্তির খবরে ক্ষোভ বেড়েছে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। দখল করা পশ্চিম তীরে বসবাসকারী ২৮ লাখ ফিলিস্তিনির জন্য মাত্র কয়েক হাজার ভ্যাকসিন দিয়েছে ইসরায়েল। তার ওপর গত সপ্তাহে গাজাবাসীর জন্য ভ্যাকসিনের প্রথম চালান পিছিয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সরকার।