মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎই পাশে চা-সিগারেট বিক্রেতা এক নারীকে দেখে খটকা লাগলো। কারণ তিনি আর পাঁচ জন চা বিক্রেতার মতো নন। সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেল থেকে নেমে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করলাম। ওই নারীর সামনে চায়ের ফ্লাস্ক ও পান সিগারেট বিক্রি করার জন্য ছোট একটি টিনের বাক্স। তাঁর পাশে বসা চার বছরের ছেলে সানি।
‘দোকান আপনার?’— প্রশ্ন করতেই ওই নারী জবাব দেন, ‘হ্যাঁ’। জানতে চাইলাম, কতদিন ধরে
দোকানদারি করছেন। তিনি জানালেন, ঈদের আগে থেকেই।
এরপর আলোকচিত্র সাংবাদিক হিসেবে নিজের পরিচয় দিয়ে জানলাম ওই নারীর দোকানদার হয়ে ওঠার গল্প। নাম তাঁর সুমি আক্তার। বয়স ৩০ এর বেশি হবে হয়তো। দুই ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে পাঁচ জনের সংসার। দু’বছর আগে তাঁর স্বামী মারা গেছে এক দুর্ঘটনায়। এরপর তিনি কাজ নিয়েছিলেন ইস্টার্ন প্লাজায়। দিনে ১১ থেকে ১২ ঘণ্টা ডিউটি করার পর সন্তানদের ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারতেন না। এ কারণে ওই চাকরি ছেড়ে সুবিধাজনক আর কোনো কাজ না পেয়ে রাস্তায় চা, পান-সিগারেট বিক্রি শুরু করেন।
এক দিনে কত টাকার বেচা-কেনা হয়? জানতে চাইলে সুমি আক্তার জানান, আড়াই শ’ থেকে ৩০০ টাকা। এরপর আক্ষেপের সুরে তিনি জানালেন, যদি আরো বেশি মালামাল কিনতে পারতেন তাহলে বেচাকেনা ভালো হতো। কিন্তু টাকার অভাবে মালামাল ওঠাতে পারছেন না। আড়াই শ’/ তিনশ’ টাকার বেচাকেনায় আর কত লাভ থাকে।
সংসার কিভাবে চলছে জানতে চাইলে সুমি আক্তার জানান, আত্নীয়-স্বজন, পরিচিতরা সাহায্য-সহযোগিতা করছেন। তবে খুব কষ্ট হয়। বড় ছেলেটা পড়ছে ক্লাস সিক্সে। আর ছোট ছেলেটা ক্লাস ওয়ানে। তাদের খরচ আছে। তাছাড়া প্রতি মাসে ছয় হাজার টাকা ঘর ভাড়া দিতে হয়।
কথাবার্তার একপর্যায়ে সুমি আক্তার বললেন, ‘একটা চাকরি দেবেন, আমাকে?’ আমি তাকে খুব একটা আশ্বস্ত করতে পারিনি। শুধু বলেছি, চেষ্টা করবো।