1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ইসলামে শিল্পকলা ও সৌন্দর্যপ্রীতি

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শুক্রবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

মহান আল্লাহ মানুষকে নানামুখী প্রতিভা দিয়ে সৃষ্টি করেন। আল্লাহপ্রদত্ত প্রতিভা কাজে লাগিয়ে মানুষ বিভিন্ন শিল্পের অবতারণা করে। প্রথমে মনের গভীরে কল্পনা আসে। এরপর বিভিন্ন কলা-কৌশলের মাধ্যমে সেই কল্পনার বাস্তবায়ন হয়ে একটি শিল্পের রূপ নেয়। শিল্পের মাধ্যমে মানুষের কল্পনাশক্তি ও কারিগরি দক্ষতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শিল্পকলার মাধ্যমে সৃষ্ট বস্তুকে শিল্পকর্ম এবং যে ব্যক্তি শিল্পকর্ম সৃষ্টি করে তাকে শিল্পী বলা হয়। ইসলামে শিল্পকলার পরিধি ও স্বরূপ নিম্নরূপ—

সুন্দর আওয়াজে কোরআন তিলাওয়াত : সহিহশুদ্ধ ও সুন্দরভাবে কোরআন তিলাওয়াত একটি ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। প্রতি হরফের জন্য রয়েছে ১০টি করে নেকি। সুললিত উচ্চারণের মাধ্যমে কোরআন তিলাওয়াতের চর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। একদিকে কোরআন তিলাওয়াত ইবাদত, অন্যদিকে তা ইসলামী সংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ। বরং এটি একটি শিল্প। তিলাওয়াতের সুর অবিশ্বাসীকেও স্পর্শ করে। নবী (সা.) যখন তিলাওয়াত করতেন তখন চারপাশের ইসলামবিদ্বেষী কাফিররাও সেই সুরধ্বনিতে মোহিত হতো। বারাআ ইবনে আজিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমাদের সুললিত কণ্ঠে কোরআনকে সুসজ্জিত করো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭০; নাসাঈ, হাদিস : ১০১৫; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ১৩৪২)

আরেকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দর আওয়াজে কোরআন পড়ে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৭০৮৯)

আরবি ক্যালিগ্রাফি : ক্যালিগ্রাফি হলো চমৎকার লিখনশিল্প। কোরআন সংরক্ষণ প্রচেষ্টা থেকে ক্যালিগ্রাফি বা সুন্দর হস্তলিখন শিল্পের সূত্রপাত হয়েছে। পৃথিবীতে দৃশ্যমান শিল্পকলার আদি উৎসই হলো লিপি। লিপির মাধ্যমে এক সভ্যতার সঙ্গে অন্য সভ্যতার সংযোগ এবং জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সংস্কৃতির পরিচয় লাভ করা যায়। লিপিকে শিল্পে রূপ দেওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো ক্যালিগ্রাফি। বিভিন্ন ভাষার ক্যালিগ্রাফি থাকলেও রূপ-মাধুর্যে আরবি ক্যালিগ্রাফি অতুলনীয়।

স্থাপত্য ও অলংকরণ : পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত গৃহ হলো মসজিদ, যা মক্কায় স্থাপিত কাবাগৃহ। মসজিদকে কেন্দ্র করেই মুসলিম উম্মাহর জীবন আবর্তিত হয়। মসজিদ ছাড়া মুসলিম জনপদের ধারণাই করা যায় না। মসজিদ নির্মাণ, সংরক্ষণ এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে পরিগণিত। মসজিদ নির্মাণশৈলী থেকে সৃষ্টি হয়েছে স্থাপত্য এবং অলংকরণশিল্পের। মহান আল্লাহ মসজিদকে সমুন্নত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘সেই সব গৃহে যাকে সমুন্নত করতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে সেসব লোক, যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ থেকে, সালাত কায়েম ও জাকাত প্রদান থেকে বিরত রাখে না, তারা ভয় করে সেই দিনকে, যেদিন বহু অন্তর ও দৃষ্টি বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩৬-৩৭)

জ্যামিতিক নকশা : শিল্পকলায় জ্যামিতিক নকশা মুসলমানদের হাতেই সূচিত হয়েছে। ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রচলিত আট কোনাকার তারকা এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। আরব গণিতবিদদের কাছে জ্যামিতি ছিল চরম আগ্রহের বিষয় এবং তারাই ইসলামী শিল্পকলায় জ্যামিতিক নকশার প্রচলন করেন। বর্তমানে ইসলামী স্থাপনা, পোস্টার এবং ইসলামী গ্রন্থের মোড়ক অলংকরণে জ্যামিতিক নকশার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

চিত্রশিল্প : বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, ফুল-পাতা, নদ-নদী, প্রাকৃতিক দৃশ্য, জড়পদার্থ এবং মসজিদ ইত্যাদির চিত্রাঙ্কন ইসলামী শিল্পকলায় ব্যবহৃত হয়। পোশাক, পর্দা, মাদুর, কার্পেট ইত্যাদিতে এ ধরনের চিত্রের ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে কোনো প্রাণির চিত্রাঙ্কন ইসলামে অনুমোদিত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে তাদের, যারা প্রাণির চিত্র অঙ্কনকারী।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬০৬)

প্রতিকৃতি নির্মাণ : সৌন্দর্যবর্ধন, স্মৃতিচারণা বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনে স্তম্ভ, ফলক, মিনার বা অন্য কিছুর প্রতিকৃতি ইসলামী শিল্পকলায় প্রাণির ভাস্কর্য নির্মাণের বিকল্প হতে পারে। কারণ চিত্রাঙ্কনের মতো ইট, পাথর, মাটি বা অন্য কিছুর মাধ্যমে প্রাণির প্রতিকৃতি নির্মাণও ইসলামে অনুমোদিত নয়। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, এই প্রতিকৃতি নির্মাতাদের কিয়ামতের দিন আজাবে নিক্ষেপ করা হবে এবং তাদের সম্বোধন করে বলা হবে, যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৫১)

কাব্য ও সাহিত্য চর্চা : রাসুল (সা.) কবি ছিলেন না। তিনি কখনো কাব্যচর্চাও করেননি। কবিতা তাঁর জন্য সমীচীনও নয়। কারণ আল্লাহ তাঁকে মহাগ্রন্থ কোরআন দান করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘আমি রাসুলকে কাব্য রচনা করতে শেখায়নি এবং তা তার জন্য শোভনীয় নয়। এ তো শুধু এক উপদেশ এবং স্পষ্ট কোরআন।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৯)

তবে রাসুলের একজন সভাকবি ছিলেন। তাঁর নাম হাসসান বিন সাবিত (রা.)। তিনি ইসলামবিদ্বেষী কবিদের কবিতার জবাব দিতেন এবং ইসলামের সৌন্দর্য কবিতার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতেন। এ ছাড়া সাহাবিদের মধ্যে আরো অনেকে কবি ছিলেন। সত্য ও সুন্দর বিষয়ের কাব্য ও সাহিত্যচর্চা ইসলামে অনুমোদিত। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কবিতা একটি কথা। অতএব ভালো কবিতা (ভালো কথার মতো) ভালো আর মন্দ কবিতা (মন্দ কথার মতো) মন্দ। (দারা কুতনি, হাদিস : ৪৩৫১)

পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের অনুমোদনহীন, অপচয়মূলক ও অর্থহীন কর্মকাণ্ড পরিহার করে সুস্থ, সুন্দর ও অর্থবহ শিল্পকলাচর্চা করলে ক্রমান্বয়ে মানুষ সুপথে পরিচালিত হবে এবং শিশুদের মনে ইসলামের সৌন্দর্য ও মানবিকতা জাগ্রত হবে, ইনশাআল্লাহ। এতে আল্লাহপ্রদত্ত প্রতিভার যথাযথ ব্যবহার হবে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব