সারাদেশে কোভিড-১৯ টিকাদান শুরুর দিনে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে নার্সকে সরিয়ে নিজেই টিকা দেওয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান খান।
রোববার তার টিকা দেওয়ার এই ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠেছে; কেননা মান্নান খান কোনো চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীও নন কিংবা টিকা দেওয়ার কোনো প্রশিক্ষণও তার নেই।
মান্নান খান উপজেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। তিনি টিকা দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সোশাল মিডিয়ায় তা ‘অতিরঞ্জিত‘ হয়ে প্রচার হচ্ছে বলে দাবি করেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘অতি উৎসাহে’ টিকা দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন মান্নান খান।
প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী থাকার পরও মান্নান খান কীভাবে টিকা দিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম।
সোশাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কেন্দ্রে টিকা দেওয়া শুরু হয়। সেখানে চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবকেরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় নার্সদের কাছ থেকে সিরিঞ্জ হাতে নিয়ে তিনজনের শরীরে টিকা দেন আবদুল মান্নান খান। তার মুখে মাস্ক ছিল না। নার্স ও চিকিৎসকরা তাকে টিকাদানে কাজে সহায়তা করছেন।
তিনি যে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের টিকা ‘পুশ’ করেছেন তারা হলেন- কুমারখালী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মী মোখলেছুর রহমান ও স্থানীয় সাংবাদিক কেএমআর শাহীন।
সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমি ভয় পাচ্ছিলাম। অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম। পরে শুনেছি উপজেলা চেয়ারম্যান টিকা পুশ করেছেন। চেয়ারম্যান না দিয়ে নার্স দিলেই ভালো হত।”
শাহীন বলেন, “বিষয়টি এত সমালোচনার মুখে পড়বে, তা আগে বুঝতে পারিনি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মান্নান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি আসলে যেভাবে বেরিয়েছে, তা অতিরঞ্জিত। কিছু সাংবাদিক রঙচঙ লাগিয়ে এত বড় করে ফেলেছে।”
তাহলে আসলে কী ঘটেছে- এই প্রশ্ন করলে তিনি তার কোনো উত্তর দেননি।
প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী থাকতেও অপ্রশিক্ষিত একজন কী করে টিকা দিলেন- প্রশ্ন করা হলে সিভিল সার্জন আনোয়ারুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন জনপ্রতিনিধি কিভাবে টিকা দিলেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। স্বাস্থ্য বিভাগের কারও কোনো গাফিলতি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থ্য নেওয়া হবে।”
বিষয়টি যে ঝুঁকিপূর্ণ, তা স্বীকার করেন ডা. আনোয়ারুল।
“এসব ক্ষেত্রে সামান্যতম নিয়মের বিচ্যুতি হলে বড় রকমের স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিষয়টি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।”