রাজধানীর অদূরে পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের কাজ শেষ। রবিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সরকারের কাছে এটি বুঝিয়ে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর থেকেই এই সেন্টারে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার কথা। তবে করোনার কারণে আপাতত মেলা স্থগিত রয়েছে। তবে যখনই হোক, এখন থেকে প্রতিবছর এখানেই অনুষ্ঠিত হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ২০১৫ সালে চীনের সহায়তায় ৭৯৬ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয় ইপিবি। ‘বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স’ (বিসিএফইসি) নামের এ প্রকল্প নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণখালীর বাগরাইয়াটেকের ২০ একর জায়গার ওপর বাস্তবায়ন হয়েছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭৯৬ কোটি টাকার মধ্যে চীন সরকার ৬২৫ কোটি এবং বাংলাদেশ সরকার ১৭১ কোটি টাকা দিয়েছে। বাস্তবায়ন চুক্তি অনুযায়ী, চীন সরকারের নির্মাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ এই এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজ করেছে।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স আনুষ্ঠানিকভাবে রবিবার রফতানি উন্নয়ন বুরোর কাছে বুঝিয়ে দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চাইনিজ স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন। সকাল সাড়ে ১০টায় এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও উপস্থিত থাকবেন।
জানা গেছে, ঢাকার শেরেবাংলা নগরের মেলার অস্থায়ী মাঠ থেকে পূর্বাচলে নির্মিত সেন্টারটির দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। আর রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলের এ প্রদর্শনী কেন্দ্রটির দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। প্রদর্শনী কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন ঢেউ খেলানো ছাদের নিচে দুই লাখ ৬৯ হাজার বর্গফুটের দুটি পৃথক প্রদর্শনী হলে আছে ৮০০ স্টলের ব্যবস্থা। স্টলগুলো প্রতিটি ৯ বর্গফুটের। সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রদর্শনী স্থলে সম্মেলনকক্ষ, খাবারের জন্য বিশাল কক্ষ ও শিশুদের খেলার জায়গা রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের মেলা আয়োজনের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। রয়েছে ডরমেটরি। একসঙ্গে ৫০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা বিদেশ থেকে এখানে এসে পণ্য প্রদর্শন করবেন, তাদের জন্য থাকার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ২০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই এক্সিবিশন সেন্টার।
জানা গেছে, স্থায়ীভাবে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্র করার জন্য ২০০৯ সালে প্রাথমিকভাবে তেজগাঁও পুরোনো বিমানবন্দরের ৩৯ একর খালি জায়গা নির্ধারণ করা হয়। পরে সেখানে জায়গা না পাওয়ায় প্রকল্পটি সময়ের বিবেচনায় পূর্বাচল উপশহরে সরিয়ে নেওয়া হয়। ২০১৭ সালের অক্টোবরে প্রদর্শনী কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি কেনা বাবদ সরকার দিয়েছে ১৭০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী কেন্দ্রে বছরে একবার মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাইরেও সারা বছর সোর্সিং ও পণ্য প্রদর্শনী হবে। সে জন্য পাঁচ তারকা হোটেল, নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্র, ভূগর্ভস্থ পার্কিং ইত্যাদি করা হবে। এসব স্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে বাড়তি ১৫ একর জমি পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ‘সারা বিশ্বে করোনা মহামারির এই পরিস্থিতিতে সার্বিক দিক বিবেচনায় রেখে এ বছরের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আপাতত স্থগিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে এ মেলা পূর্বাচলে নির্মিত নতুন সেন্টারেই অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে সেন্টারটি মেলার জন্য প্রস্তুত করতে ইপিবিকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিআরটিসি বাসে ২৫ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল অংশের কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত। এখান থেকে পাঁচ থেকে সাত মিনিট হাঁটলেই পাওয়া যাবে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার কমপ্লেক্স।