1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শক্তি বাড়ছে চীনের, টার্গেটে কি ভারত? - Dainik Deshbani
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

শক্তি বাড়ছে চীনের, টার্গেটে কি ভারত?

Maharaj Hossain
  • সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

ভারত ও চীনের সম্পর্ক বরাবরই জটিল ও বহুমাত্রিক। একদিকে রয়েছে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অন্যদিকে রয়েছে সীমান্ত বিরোধ ও কৌশলগত প্রতিযোগিতা। সম্প্রতি চীনের সামরিক বাজেট বৃদ্ধি ও ভারতের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তবে, চীনের সামরিক শক্তির এই বৃদ্ধির পেছনে কি শুধু ভারতকে লক্ষ্য করা, নাকি বৃহত্তর কৌশলগত উদ্দেশ্য রয়েছে? এই দুই দেশের সম্পর্ক কীভাবে সামরিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে নতুন মোড় নিতে পারে সেসব নিয়েই এ প্রতিবেদন।

চীনের সামরিক বরাদ্দ

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় তিনগুণ বরাদ্দ করেছে চীন। ২০২৫ সালের জন্য দেশটির প্রতিরক্ষা বাজেট ৭ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৫ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রকৃত সামরিক ব্যয় ঘোষিত বাজেটের চেয়েও ৪০-৫০ শতাংশ বেশি হতে পারে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সরকার ২০২৭ সালের মধ্যে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। নতুন বাজেটে স্থল, নৌ, আকাশ, পরমাণু, মহাকাশ ও সাইবার নিরাপত্তায় ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, চীনের প্রকৃত প্রতিরক্ষা ব্যয় সরকারি ঘোষণার চেয়েও বেশি হতে পারে। সরকারি হিসাবে এটি বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেট, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের (৮৫০ বিলিয়ন ডলার) পরেই অবস্থান করছে।

গেল বছরের শেষ দিকে মার্কিন বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিভিন্ন রকমের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে চীন। চলতি বছর মে মাস পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে চীনের কাছে ৬০০টির বেশি কার্যকরী পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সংখ্যাটি এক হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রেক্ষাপটে চীনের এই বিপুল সামরিক বাজেট ভারতের জন্যও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, চীনের সামরিক সম্প্রসারণ দক্ষিণ চীন সাগর ও ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যে পরিবর্তন আনবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারত-চীন সম্পর্ক: শত্রুতা নাকি বন্ধুত্বের পথে?

সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর বক্তব্যে পারস্পরিক সহযোগিতার বার্তা দিলেও অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, দুদেশের সম্পর্ক বারবার টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গেছে।

সীমান্ত বিরোধ ও সামরিক উত্তেজনা

১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধ ছিল দুই দেশের মধ্যে প্রথম বড় সংঘর্ষ। এরপর থেকেই সীমান্ত নিয়ে নানা সময়ে উত্তেজনা দেখা গেছে। ২০২০ সালে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা ও চারজন চীনা সেনার মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে এবং সম্পর্কের শীতলতা বাড়তে থাকে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতা

দুই দেশের অর্থনীতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। চীন ভারতের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার হলেও, ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারত চীনের বেশ কিছু অ্যাপ নিষিদ্ধ করে এবং চীনা বিনিয়োগের উপর কড়াকড়ি আরোপ করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আলোচনা চলছে।

কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভারত ও চীন একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভারতের কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমাগত যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের সঙ্গে শক্তিশালী হচ্ছে, যা চীনের দৃষ্টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পদক্ষেপ। অন্যদিকে, চীন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করেছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক।

ভারতকে কাছে আসার আহ্বান

ওয়াং ইর সাম্প্রতিক বক্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, চীন এখন ভারতকে ঘনিষ্ঠ করতে চায়। বেইজিং বলছে, দুই দেশকে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে এবং সীমান্ত বিরোধ যেন সামগ্রিক সম্পর্ককে সীমাবদ্ধ না করে। এটি এমন এক সময় বলা হচ্ছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং ভারতকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে দেখছেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র: বাণিজ্য ও সামরিক যুদ্ধের শঙ্কা

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ ও সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ঘোষণা করেছেন, চীন যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত, বিশেষ করে বাণিজ্য ও শুল্ক ইস্যুতে। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্রও সামরিক প্রস্তুতি বাড়িয়েছে, এবং চীনের সঙ্গে সম্ভাব্য সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়েছে পেন্টাগন।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সামরিক বাজেট প্রায় ৮৫০ বিলিয়ন ডলার। দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, বিশেষত দক্ষিণ চীন সাগর, তাইওয়ান ইস্যুতে। বাণিজ্যিক দিক থেকে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে এবং চীন পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি বিশ্ব বাণিজ্যব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলছে এবং আগামীতে আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে চীন যদিও নিজেকে শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে দেশটির। যেমন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনে যুদ্ধে ঢুকে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানে চীনা সামরিক মহড়া চালানো পছন্দ নয় যুক্তরাষ্ট্রের। এসব কারণে আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং চীন নতুন অংশীদার খোঁজার চেষ্টা করছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কযুদ্ধের কারণে তাদের কিছু সহযোগী দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, চীন এখনও বাণিজ্যযুদ্ধের সমাধান চাইছে, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আলোচনার পথ সংকুচিত।

চীনের শক্তি বাড়ানোর মূল লক্ষ্য আসলে কী

চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ড্রোন প্রযুক্তি, মহাকাশ যুদ্ধ ও পরমাণু অস্ত্র সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে বিশেষ জোর দিচ্ছে। চীনের সামরিক নীতির মূল লক্ষ্য ভারতকে দমানো নয়, বরং দেশটির হলো যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা, তাইওয়ানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা, দক্ষিণ চীন সাগরে আধিপত্য বজায় রাখা ও প্রযুক্তিগত সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উত্তেজনা এবং প্রতিযোগিতা ভবিষ্যতে এশিয়া ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল, বিবিসি, এনডিটিভি.

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব