1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
টি-ব্যাগ থেকে মানব দেহে মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকের প্রবেশ - Dainik Deshbani
সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০১ পূর্বাহ্ন

টি-ব্যাগ থেকে মানব দেহে মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকের প্রবেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • রবিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২৫

টি-ব্যাগে চা পানের অভ্যাস আমাদের সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষ করে অফিস, বাসা বা বন্ধুদের আড্ডায় টি-ব্যাগের মাধ্যমে চা তৈরি করা অনেক সহজ ও সময়সাশ্রয়ী। তবে সাম্প্রতিক একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই সুবিধার সঙ্গে একটি বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি জড়িয়ে আছে।

২০২৪ সালের ১৯ ডিসেম্বর ‘কেমোস্ফিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত বার্সেলোনার অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে, বাণিজ্যিক টি-ব্যাগ থেকে নির্গত মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

গবেষণায় আরও জানানো হয়, পলিমার বা প্লাস্টিক উপাদানে তৈরি টি-ব্যাগ থেকে চা বানানোর সময় লাখ লাখ ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা নির্গত হয়। এ ছাড়াও গবেষণায় ব্যবহৃত টি-ব্যাগগুলো বাজারে সহজলভ্য ব্র্যান্ড থেকে সংগ্রহ করা হলেও সেগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি।

তবে এই ব্যাগগুলো তৈরি ছিল নাইলন-৬, পলিপ্রোপিলিন এবং সেলুলোজ দিয়ে। চা তৈরির সময় প্লাস্টিকের এসব উপাদান থেকে বিপুল সংখ্যক মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিক নির্গত হতে দেখা যায়।

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে

পলিপ্রোপিলিন : প্রতি মিলিলিটার চায়ের পানিতে ১.২ বিলিয়ন প্লাস্টিক কণা ত্যাগ করে। সেলুলোজ : ১৩৫ মিলিয়ন প্লাস্টিক কণা ত্যাগ করে। নাইলন-৬ : ৮.১৮ মিলিয়ন প্লাস্টিক কণা ত্যাগ করে। এই ক্ষুদ্র কণাগুলো মানুষের অন্ত্রের কোষ শোষণ করে রক্তপ্রবাহে প্রবেশ করে এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে।

কীভাবে ক্ষতি হয়?

গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, নির্গত এই প্লাস্টিক কণাগুলো মানুষের অন্ত্রের মিউকাস উৎপাদনকারী কোষে প্রবেশ করতে পারে। শুধু তাই নয়, এগুলো কোষের কেন্দ্রস্থল নিউক্লিয়াস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। নিউক্লিয়াস হল কোষের জেনেটিক উপাদান নিয়ন্ত্রণকারী অংশ। প্লাস্টিক কণার এই ধরনের কার্যক্রম কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেওয়া বার্সেলোনার অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক আলবা গার্সিয়া-রদ্রিগেজ বলেন, আমরা দূষণ কণাগুলোর উপস্থিতি নতুন প্রযুক্তি দিয়ে শনাক্ত করেছি। এর ফলে মানব দেহের ওপর এর প্রভাব আরও বিস্তারিতভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি ভবিষ্যতে নতুন গবেষণার ভিত্তি তৈরি করবে।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রভাব

বাংলাদেশে বাণিজ্যিক টি-ব্যাগের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ চা বানানোর ঝামেলা এড়িয়ে সহজেই পান করার জন্য টি-ব্যাগ এখন অনেকের পছন্দ। তবে এই গবেষণার তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। বাংলাদেশের বাজারে যেসব টি-ব্যাগ সহজলভ্য, সেগুলোতেও এই ধরনের উপাদান থাকতে পারে।

স্বাস্থ্যঝুঁকি কী কী হতে পারে?

গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকের কারণে শরীরে নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি, পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি, জেনেটিক উপাদান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মিউটেশনের ঝুঁকি, বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ এবং বিভিন্ন রোগ-বালাই ও দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি।

কীভাবে ঝুঁকি এড়ানো যায়?

টি-ব্যাগের পরিবর্তে বিশেষজ্ঞরা কিছু সহজ পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে পাতা চা ব্যবহার করা বা টি-ব্যাগের পরিবর্তে পাতা চা দিয়ে চা তৈরি করা। প্রাকৃতিক ছাঁকনি ব্যবহার করা যেমন : ধাতব বা কাপড়ের ছাঁকনি দিয়ে চা বানানো নিরাপদ। চায়ের টেকসই ব্র্যান্ড বাছাই করে পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি টি-ব্যাগ ব্যবহার করা। টি-ব্যাগ ব্যবহারে সচেতনতা জরুরি।

এ বিষয়ে গবেষকরা বলছেন, মাইক্রো ও ন্যানোপ্লাস্টিকের মানব শরীরে প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। এই গবেষণাগুলো থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে নীতিমালা তৈরি হতে পারে, যা স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস নিশ্চিত করবে। চা আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ হলেও এর নিরাপদ উপভোগ নিশ্চিত করতে সচেতন হওয়া জরুরি। টি-ব্যাগের পরিবর্তে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চা বানানোর অভ্যাস গড়ে তোলা হলে এই ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব