1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২১ অপরাহ্ন

দুদকে নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট থাকা জরুরি

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যেসব মামলা করে সেগুলোর বিচার করা হয় বিশেষ জজ আদালতে। ওই আদালতে পুলিশি তদন্তের আওতায় থাকা ফৌজদারি অপরাধের মামলারও (মাদক মামলা, চেকের মামলা) বিচার হয়। বিশ বছর ধরে দুর্নীতির মামলা বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। দেশের ‘এক নম্বর সমস্যা দুর্নীতি’র বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে দুর্নীতিবাজরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যান। তাদের শাস্তি হলেও চূড়ান্ত রায় পেতে বছরের পর বছর এমনকি এক যুগেরও বেশি সময় লেগে যায়। এতে সমাজে দুর্নীতিবাজের শাস্তির কোনো প্রভাব পড়ে না। অনেকে জামিন পেয়ে বুক ফুলিয়ে বের হয়ে আসেন। দুর্নীতির বিচারের আগে অনুসন্ধান ও তদন্তকালেই বিচারের সব তথ্য-উপাত্ত নির্ভরযোগ্য হওয়ার কথা। কারণ যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাকেই প্রমাণ করতে হয় তিনি দুর্নীতি করেননি। অভিযোগের অনুসন্ধান ও তদন্তকালে তার বিরুদ্ধে দালিলিক প্রমাণ না থাকলে মামলা বা চার্জশিট হওয়ার কথা নয়। আদালতে শুধু সেসব মামলার দালিলিক প্রমাণের পক্ষে সিজারলিস্টের সাক্ষীরা এসে বলবেন যে-তিনি এসব বিষয়ে জানেন বা তার দপ্তর জানে। মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তার সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে বিচার শুনানি শেষ হয়। আদালতেও আসামিকেই তার কাগজপত্র ও দলিল দিয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে হয়। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রায় দেন। দুর্নীতির মামলার বিচার শেষ করতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন না হলেও বর্তমান বিচার পদ্ধতির কারণে একেকটি মামলার রায় পেতে বহু বছর লেগে যায়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পৃথক আদালত গঠনের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ডেসটিনি বা হলমার্কের মামলার বিচার শেষ হতে এত বছর লাগছে কেন-এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, বিচার প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে হবে। একটা মামলা রুজু থেকে শুরু করে তদন্ত, বিচারিক আদালতের রায়, হাইকোর্টে আপিলের রায় এবং সুপ্রিমকোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি পর্যন্ত সর্বোচ্চ দুই বছর সময় দেওয়া যেতে পারে। সেটাও বেশি। কিন্তু বাস্তবে হচ্ছে সম্পূর্ণ উলটো। ১৮০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদালতে বিচার শেষ করার বিধান থাকলেও কোনো মামলার ক্ষেত্রেই মানা হয় না। এর জন্য কোনো কৈফিয়ত বা জবাবদিহিও নেই। তিনি বলেন, দুদক সংস্কারের ক্ষেত্রে আইনে এসব বিষয়কে যুক্ত করা যেতে পারে। তার মতে, উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির অন্তত ২০০টি মামলা ২ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা দরকার। এর পৃথক আদালত, বেঞ্চ বা প্রয়োজনে সাক্ষ্য আইনকেও সময়োপযোগী করতে হবে।

অলিখিত নির্দেশ বন্ধ করতে হবে : দুর্নীতির মামলার বিচারসংক্রান্ত বিষয়ে সঙ্গে আলাপ হয় দুদকের সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক, বর্তমান পরিচালক, তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক আইনজীবীদের। তারা জানান, ওপরের ‘নিগন্যালে’ অনেক মামলার বিচারও আটকে যায়। আবার অনেকের বিচার দ্রুত সচল হয়। এগুলোও দুর্নীতি। এটা বন্ধে আইনে ধারা সংযোজন করা দরকার। বিগত সাড়ে ১৫ বছরে বিরোধী মতের অনেকের মামলার বিচারে তাড়াহুড়া করা হয়েছে। এমনকি রাতের আঁধারেও মোমবাতি জ্বালিয়ে বিচার শুনানি হয়েছে। গেল জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক নেতাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে তড়িঘড়ি করে সাজা দেওয়ার জন্য সরকারি আইনজীবী ও দুদকের আইনজীবীরা তৎপরতা চালান। চাপ আসে ওপর থেকে। ‘হুকুম তামিল’ করতে দিনরাত কাজও করেন তারা।

আদালতে কর্মরত কয়েকজন আইনজীবী প্রায় অভিন্ন তথ্য দিয়ে বলেন, অন্য আইনে বিচারে হয়রানির অভিযোগ তো আছে। কিন্তু দুদকের মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া কীভাবে রায় হবে? সরকারদলীয় কেউ আসামি হলে তার মামলার গতি শ্লথ হয়ে যেত। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকায় তারা ওইসব আসামির বিষয়ে তেমন কিছু করতে পারেননি। পরে এক সময় কোনো না কোনোভাবে তারা পার পেয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনায় দুদকের আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ায় তারাও সরকারের নির্দেশমতোই বিচার শুনানি করেছেন। মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত-এমন একজন আইনজীবী বলেন, দুদকের একাধিক শীর্ষ আইনজীবী আদালতে সরাসরি ‘সরকারদলীয় আইনজীবী’র মতো ভূমিকা রেখেছেন। বিচারিক আদালত থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত সর্বত্রই এ ধরনের প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ রয়েছে। তারা এমন ভাষায় কথা বলতেন, যেন বিরোধী মতের কারও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকারই নেই। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ মামলায় বিচারিক আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের অতি উৎসাহে কমিশন ওই সাজার মেয়াদ ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১০ বছর করার উদ্যোগ নেন। ইকবাল মাহমুদের নির্দেশে দুদকের আইন শাখার মাধ্যমে ১০ বছর সাজার ড্রাফট তৈরি করে আইনজীবীর মাধ্যমে হাইকোর্টে দাখিল করেন। ওই বছর ৩০ অক্টোবর দুদকের পক্ষে রিভিশন আবেদন গ্রহণ করে খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ। রায়ের পর দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে পারবেন না।’ এমন বাস্তবতায় ‘কঠোর দলবাজ’ আইনজীবীদের দুদকে নিয়োগ না দেওয়ার পরামর্শ দেন আইনজীবীরা। তারা বলেন, আইনজীবী নিয়োগের ক্ষেত্রে বিধি করে বা পৃথক প্রসিকিউশন সেল গঠন করে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও দলনিরেপক্ষ আইনজীবীদের এই প্যানেলের মাধ্যমে নিয়োগে বিধান যুক্ত করতে হবে দুদক আইনে। আদালতের বিচারকাজকেও সরকারের হস্তক্ষেপমুক্ত রাখতে হবে।

পৃথক আদালত ও বেঞ্চ : সংশ্লিষ্টরা বলেন, দুর্নীতির মামলার বিচারের জন্য বিচারিক আদালত হতে হবে পৃথক। বর্তমানে বিশেষ দায়রা জজ আদালতে বিচার হয়। কিন্তু ওই আদালতে মাদক, চেক ডিজ অনার, এমনকি বিস্ফোরক মামলার বিচারও হয়। এতে করে অন্য অপরাধের মামলার চাপে দুদকের মামলার শুনানির সুযোগ হয় মাত্র ৯ ভাগ। তারা বলেন, উচ্চ আদালতেও পৃথক বেঞ্চ থাকতে হবে। এর সপক্ষে যুক্তি দিয়ে তারা বলেন, বিধান হচ্ছে-১৮০ দিনের মধ্যে দুর্নীতির মামলার বিচার শেষ করার। কিন্তু পলাতক আসামি ছাড়া কারও বিচার ১৮০ দিনে হয় না। এখনো ২০০৭-২০০৮ সালের (১/১১) দুর্নীতির অনেক মামলার বিচার প্যান্ডিং। পুরোনো এসব পদ্ধতি বাদ দিয়ে নতুন-পুরোনো সব মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টেও নির্দিষ্ট বেঞ্চ থাকতে হবে বলে মতামত দেন তারা। বলেন, ওইসব বেঞ্চে অন্য কোনো মামলার বিচার হবে না। পাশাপশি আপিল বিভাগেও সপ্তাহে অন্তত ১ দিন একটা বেঞ্চ দুর্নীতির মামলার আপিল শুনানি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

দুদকের আইন ও প্রসিকিউশন শাখার সাবেক মহাপরিচালক মাইদুল ইসলাম বলেন, দুদকের মামলা পরিচালনার জন্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের মতো পৃথক আদালত হলে ন্যায়বিচার দ্রুত করা সম্ভব। কোনো আসামি স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করলে তার সাজার মেয়াদ কমিয়ে আর্থিক জরিমানা করে দণ্ড নিশ্চিত করলে মামলা জটও কমবে। যারা দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হবেন, তারা পরবর্তী সময়ে কোনো পদে নির্বাচন করতে পারবেন না, সরকারের লাভজনক কোনো পদে বসতে পারবেন না, সমাজে ক্ষমতায়িত হতে পারবেন না, এমনকি কোনো সভা-সমিতির নির্বাচনও করতে পারবেন না-এসব বিধান রেখে আইনের সংশোধনী আনা যেতে পারে। এতে ভবিষ্যৎ দুর্নীতিবাজরা সাবধান হবেন। দুর্নীতিবাজদের সবার সাজার ফল একই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অপর একজন পরিচালক বলেন, সামান্য কিছু অবৈধ সম্পদের মামলার পেছনে দুদককে না ঘুরে উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতির মামলার অনুসন্ধান তদন্ত ও বিচারের দিকে মনোযোগী করার জন্য নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থ পাচার সংক্রান্ত অনুসন্ধান তদন্ত ও মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এভিডেন্স। দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের কাছ থেকে ডকুমেন্টস না পেলে অপরাধীর বিরুদ্ধে মামলা বা শাস্তি দেওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে দুদক কীভাবে দেশের বাইরে থেকে অর্থ পাচারের তথ্য পেতে পারে সে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এছাড়া দুদকের হাত থকে ২০১৫ সালে দুদকের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া অর্থ পাচারের তদন্তের সম্পূর্ণ এখতিয়ার দুদককে দিতে হবে।

দুদকের আইনজীবী মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, দুর্নীতির মামলার তদন্ত ও বিচারের ক্ষেত্রে আইনজীবী-প্রসিকিউটর ও দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের মাঝে সমন্বয়ের অভাব থাকে। এটি দূর করতে হবে। অগ্রাধিকার মামলার কোয়ালিটি তদন্ত এবং বিচারের জন্য প্রয়োজনে আইনজীবী প্যানেলের সদস্যদের মাধ্যমে ‘ভ্যাটিং’ সিস্টেম চালু করতে হবে। ২০০৭-০৮ সালে ভ্যাটিংয়ের মাধ্যমে আদালতে মামলা পাঠানো হতো। এখন সেটি নেই।

তিনি আরও বলেন, দুর্নীতি মামলার বিচারের ক্ষেত্রে বাধা-এক রাষ্ট্রে এক নাগরিকের জন্য দুই আইন প্রয়োগ। একজন নাগরিক তার আয়ের হিসাব জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) জানান। এনবিআরের আইন অনুযায়ী তারা করদাতার তথ্য যাচাই-বাছাই করে তা গ্রহণ করে। এনবিআরে গৃহীত একজন নাগরিকের সম্পদের হিসাবের পর দুদক থেকে যখন একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্ত হয়, তখন ওই ব্যক্তির এনবিআরের ফাইল এনে প্রতিষ্ঠানটির গৃহীত সম্পদের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাই করা হয়। এমনকি এনবিআর যে সম্পদের বৈধতা দিয়েছে তা আবার দুদকের কাছে অবৈধ সম্পদ হিসাবে দেখানো হয়। এই জায়গায় সংস্কার দরকার। এনবিআরের গৃহীত নাগরিকের সম্পদকে দুদক অবৈধ বলতে পারে কিনা- তা স্পষ্ট করতে হবে। এ নিয়ে আদালতে বিচার শুনানিতে অনেক সময় বিড়ম্বনায় পড়েন বলে জানান এই আইনজীবী। অনেক নাগরিক এই হয়রানির ভয়ে অবৈধ অর্থের সঙ্গে বৈধ অর্থও পাচার করে দেন বলে জানান অপর একজন পিপি।

অ্যাডভোকেট মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, দুর্নীতির মামলার রায়ে অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত হয়। কিন্তু আদায় হয় না। অনেক সময় জেলা প্রশাসককে এর জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে ওই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে অনেক ঝামেলা হয়। আমি মনে করি, আদালতের রায়ে কোনো দুর্নীতিবাজের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হলে সেটি রাষ্ট্রের অনুকূলে আসার পর কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে, কে উদ্ধার করবে- দুদক আইনে ‘রায়ে সম্পদ বাজেয়াপ্ত কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুদকের একটি বিশেষ সেল থাকতে পারে। এর সঙ্গে সরকারের অন্য দপ্তর থেকে সৎ, দক্ষ লোককে সংযুক্ত করা যেতে পারে। বা চুক্তিভিত্তিক কাউকে নিয়োগ দেওযা যেতে পারে। এ ছাড়া দুদকের মামলার বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়া, মামলার বিচারে সাক্ষীর নিরাপত্তা ও সাক্ষীর ভাতা প্রদানের বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করতে হবে। দুর্নীতিবাজের বিচার নিশ্চিত করার জন্য গড়পড়তা মামলার মতো দুর্নীতির মামলার বিচারকে গতানুগতিকভাবে পরিচালনা পদ্ধতি থেকে সরে আসতে হবে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব