কুমিল্লা-৪ আসনের সাবেক এমপি ও ঢাকা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও তার ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার এবং নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও, কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের এবং তার ভাতিজা কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব অপি এর বিরুদ্ধে দুদকে একই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, আবুল কালাম আজাদ ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি ঢাকা ও অন্যান্য শহরে বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী এবং উত্তরা এলাকার অভিজাত স্থানে ফ্ল্যাট ও প্লট। এসব সম্পত্তি তিনি তার দুর্নীতির টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন, যা সরাসরি জনগণের অর্থ চুরি এবং দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার শামিল। ঢাকায় বসে তিনি অন্যান্য দুর্নীতিবাজ এমপিদের সঙ্গে মিলে একটি বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। বিদেশে অর্থ পাচারসহ নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এছাড়াও গুরুতর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য, প্রশাসনের উপর প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে অর্থোপার্জন এবং ভূমি দখলের অভিযোগ। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে পেছনে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম ও কুমিল্লা-৬ আসনের এমপি বাহারের প্রত্যক্ষ মদদ এবং ছত্রছায়া রয়েছে বলে অভিযোগে জানানো হয়েছে। ফলে আবুল কালাম আজাদ তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে অবাধে দুর্নীতি ও অনিয়ম এর মহোৎসব চালিয়েছে।
অন্যদিকে, কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক এমপি এম এ জাহের এবং তার ভাতিজা কুমিল্লা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব অপি এর বিরুদ্ধে দুদকে একই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। আবু জাহের এর নিয়ন্ত্রণে ছিল কুমিল্লার সকল সরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গণপূর্ত, এলজিডি, সওজ এর প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সরকারী টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও কেউ তার সাথে আতাত করতে অস্বীকৃতি জানালে দিনে দুপুরে অফিসে ঢুকে বেইনী অস্ত্র প্রদর্শন করে ভয়-ভীতি দেখানোর ও অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে, তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি সশস্ত্র হামলার অভিযোগ উঠেছে। আবু তৈয়ব অপি জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হওয়ার ফলে সে তার অনুসারীদের নিয়ে নিরীহ ও নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর আক্রমণ চালিয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছেন যার সম্পূর্ণ ছিল অবৈধভাবে উপার্জিত। চাচা-ভাতিজা উভয়ই সাবেক এমপি বাহারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল।
দুদক সূত্র থেকে জানা যায় যে, সাবেক এমপি বাহার, তার মেয়ে কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র তাহসীন বাহারসহ তার অন্য ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুদক কাজ শুরু করেছে ও সকল ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। সাবেক এমপি বাহারের ব্যাংক হিসাবের তথ্য দুদকের হাতে ইতোমধ্যে এসেছে।
সাবেক এমপি আজাদ ও জাহেরের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদক সূত্র জানায়, এমপি বাহারের সাথে সম্পর্কিত বা সহযোগী হিসেবে যাদেরই সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের সকলের বিরুদ্ধে দুদক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।