লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিন (টিপু) ফেসবুক পোস্টে সৌদি আরবে অবস্থানের একটি ছবি দিয়েছেন। গত শনিবার ছবিটি দিয়ে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘দোয়ার দরখাস্ত’। সরকার পতনের পর আত্মগোপনে যাওয়ার পর এটাই তার প্রথম ফেসবুক পোস্ট। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোচনা–সমালোচনা চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেন সালাহ উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন চার শিক্ষার্থী। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনার জেরে পিটুনিতে নিহত হন আরও আটজন। ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যান। এরপর সালাহ উদ্দিনও আত্মগোপন করেন।
সালাহ উদ্দিন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ ছাড়া তিনি পুলিশের ওপর হামলায় দায়ের করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি।
আত্মগোপনে গোপনে যাওয়ার ২ মাস ৮ দিন পর ফেসবুকে পোস্ট দেন সালাহ উদ্দিন। ওই ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। আজ রোববার সকাল পর্যন্ত ওই পোস্টে মন্তব্য হয়েছে সাত হাজারের বেশি। অনেকেই তার ফাঁসি দাবি করেছেন। অনেকে কটাক্ষ করে সমালোচনাও করেছেন। মাকসুদ খান নামের একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বাহ্ বাহ্। এত মানুষের রক্তের জবাব দেওয়া ছাড়াই দোয়া?’ মো. শাকিল লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ভাই, গুলির হিসাব দিয়ে যান।’ রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ফাঁসির জন্য কবুল করুক।’ শাহাদাত হোসেন লিখেছেন, ‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন।’ রায়হান লিখেছেন, ‘মানুষ মেরে ওমরাহ পালন, সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে দারুণ অভিনয়।’ গাজী সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘পীর সাহেব, আপনি পালাইছেন কবে?’
গত শনিবার দুপুরে মেসেঞ্জার অ্যাপে কথা হয় সালাহ উদ্দিনের। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমি সৌদি আরবে আছি। ছাত্রদের ওপর আমি গুলি করিনি। গুলি করেছি ওপরের দিকে। আত্মরক্ষার্থে ও পরিবার-পরিজনকে হেফাজতের জন্য লাইসেন্স করা অস্ত্র দিয়ে গুলি করেছি। হত্যার সঙ্গেও আমি জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে আমি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছি, এ কারণে দলের ভেতরের ও বাইরের লোকজন অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’ কীভাবে সৌদি আরব এলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক কথা হয়েছে, এবার রাখি।’ এই বলে দ্রুত লাইন কেটে দেন তিনি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন জানান, শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে টিপু সরাসরি জড়িত। কিন্ত তিনি এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী নুর মোহাম্মদ বলেন, টিপু চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়েও দুই মাসে ধরা পড়েননি। তার গাড়ি চালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাকেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ওসি মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকার বাসার ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি বর্ষণ করেন টিপুসহ তার সহযোগীরা। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন ৪ শিক্ষার্থী। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনার জেরে পিটুনিতে নিহত হন আরও ৮ জন। ওইদিনই টিপু পালিয়ে যান। এর পর থেকে কেউই তার অবস্থান জানতে পারেননি। টিপু লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ ছাড়া তিনি পুলিশের ওপর হামলায় দায়ের করা মামলারও প্রধান আসামি।