বরিশাল নগরীতে দলের এক নেতাকে তুলে নিয়ে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যবসায়ীসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা নেয়ায় থানা থেকে সরে গেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল থেকে অবরোধ তুলে নিয়েছেন তারা।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল সামনের সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীরা চলে যান। এরপর বরিশাল থেকে দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল শুরু হয়। এরপর রাত ১১টার লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায় লঞ্চ।
এর আগে, নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ হাওলাদারকে তুলে নিয়ে মারধরের প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনাল অবরোধ করে রাখেন নেতাকর্মীরা। অবরোধের কারণে বরিশাল থেকে যাত্রীবাহী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হয় যাত্রীদের।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাসান মাহমুদ জানান, সোহাগ হাওলাদার নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তার রড, সিমেন্ট, বালুসহ নির্মাণ সামগ্রীর দোকান রয়েছে। তার কাছ থেকে নগরীর কাউনিয়ার বিসিক শিল্প নগরীর ফুরচুন সুজ’র মালিক মিজানুর রহমান বাকিতে মালামাল কেনেন। মালামাল বিক্রির পাওনা টাকা চাওয়ায় আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফুরচুন সুজ’র মালিক মিজানুর রহমান অস্ত্র ঠেকিয়ে সোহাগ হাওলাদারকে অপহরণ করে তার কারখানায় নিয়ে মারধর করেন।
তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় মিজানের বিরুদ্ধে সন্ধ্যায় কাউনিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। তবে মামলা নিতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন কাউনিয়া থানার পুলিশ কর্মকর্তারা। মামলা নিতে গড়িমসি ও হামলাকারী মিজানুর রহমানের গ্রেফতারের দাবিতে নেতাকর্মীরা সন্ধ্যার পর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এবং রূপাতলী বাস টার্মিনালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সোহাগ হাওলাদারের স্বজন ও এলাকাবাসী কাউনিয়া থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ মামলা নিলে নেতাকর্মীরা সড়ক ছেড়ে চলে যান।
পুলিশ জানায়, সোহাগ নামে ওই যুবককে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরচুন সুজ’র কারখানার মধ্যে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ গিয়ে তাকে থানায় নিয়ে আসে। সন্ধ্যার আগে একদল নেতাকর্মী এসে থানার সামনে অবস্থান নিয়ে সোহাগের মুক্তির দাবি এবং ফরচুন সুজ’র মালিক মিজানুর রহমানকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
পুলিশ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললে সন্ধ্যার পর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল অবরোধ করে সড়ক যোগাযোগ অচল করে দেয়া হয়। সোহাগ হাওলাদার পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, সে ফরচুন সু’জ প্রতিষ্ঠানের কাছে টাকা পেতেন। পাওনা টাকা আনতে গেলে তাকে আটকে রেখে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে থানায় দেয়া হয়েছে।
তবে ফরচুন সুজ’র মালিক মিজানুর রহমান জানান, তার কারখানার এক নারী শ্রমিককে বিসিক এলাকার মধ্যে উত্যক্ত করছিলেন সোহাগ হাওলাদার। তিনি গাড়িতে কারখানার দিকে যাওয়ার সময় এ ঘটনা দেখে সোহাগ হাওলাদারকে ধরে কাউনিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছেন।
বরিশাল জেলা বাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. ইউনুস আলী খান জানান, সন্ধ্যার পর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনের সড়কে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বাসা চলাচল বন্ধ করে দেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা সড়ক ছেড়ে চলে গেলে বাস চলাচল শুরু হয়।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. ফজলুল করিম জানান, দু’পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দেয়া হয়েছিল। অভিযোগ দুটি খতিয়ে দেখা হচ্ছিল। এরমধ্যে এক পক্ষের কিছু উত্তেজিত মানুষ থানা, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সোহাগ হাওলাদারের লিখিত অভিযোগটি থানায় এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়। মামলায় বাদী সোহাগ হাওলাদার ফরচুন সুজ-এর মালিক মিজানুর রহমান সহ তিনজনকে আসামি করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা থানা ও বাস টার্মিনাল থেকে সরে গেছেন। ফলে রাত সাড়ে ৯টা থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।