নির্বাচন কমিশনকে দেয়া চিঠিতে ‘জোটভূক্ত প্রার্থী’ থাকার কারণে মনোনয়ন প্রত্যাহার বিষয়টিকে ক্ষমতাসীন দল তাদের ‘কৌশল’ বলে দাবি করছে।
অন্যদিকে আসন নিয়ে দেনদরবার করলেও জাতীয় পার্টি বলছে তারাও আওয়ামী লীগের সাথে কোন জোটে নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের “প্রধান বিরোধী পার্টি” কারা?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাতে সব দল অংশ গ্রহণ করতে পারে, সে জন্য তফসিল ঘোষণার বেশ আগে থেকেই উৎসাহ দিয়ে আসছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো। এ লক্ষ্যে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সাথেও দফায় দফায় আলাপ-আলোচনা করেছে দেশগুলো।
কিন্তু নিরপেক্ষ সরকারে দাবি মেনে না নেওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না বিএনপির মত বড় দল ও তাদের সমমনা দলগুলো। ফলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখানোটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে সাবেক বিএনপি নেতাদের নেতৃত্বে বেশ কিছু নতুন দল নির্বাচনকে ঘিরে সামনে আসে। এ দলগুলো আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট ‘কিংস পার্টি’ হিসেবেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। যদিও এসব দলকে শেষপর্যন্ত কোন আসনে ছাড় দিতে দেখা যায়নি ক্ষমতাসীনদের।
পরে মিত্র দলগুলোর পাশাপাশি কিছু ছোট দলকে নির্বাচনে আনতে সক্ষম হয়, ক্ষমতাসীনরা। এক্ষেত্রে অবশ্য জোটভুক্ত দলগুলোকে কিছু আসন ছেড়ে দিতে হয়েছে দলটির।
রবিবার নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি নিয়ে ৩২টি আসন থেকে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। এসব আসনের মধ্যে ২৬টি দেওয়া হয়েছে জাতীয় পার্টিকে। যদিও দলটি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দলীয় জোটে এখন আর নেই।
তারপরও প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে তাদের সাথে সমঝোতায় গিয়েছে দলটি।
“একটি পক্ষ নির্বাচনকে পণ্ড করার চেষ্টা করছে। তাদের সেই অপচেষ্টা রুখে দিতেই আমরা সমঝোতার কৌশল নিয়েছি,” দৈনিক দেশবানী কে বলেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দৈনিক দেশবাণীকে বলেন, “জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে হলে নির্বাচন কমিশনকে আগেই জানাতে হয়। আমরা দলের পক্ষ থেকে তেমন কিছুই জানাইনি। কাজেই আমরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করছি না”।
তবে জাতীয় পার্টির সাথে এই সমঝোতা করার পেছনে অন্য কারণও রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোবাইদা নাসরিন।
“জাতীয় পার্টি নির্বাচন থেকে সরে যেতে পারে”- এমন একটা ভয় তো ছিলই।
সাথে আওয়ামী লীগ এটিও আশঙ্কা করছে যে, এভাবে কিছু আসন না ছেড়ে দিলে তারা হয়তো ৩০০ আসনেই বিজয়ী হয়ে যেতে পারে। যা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলবে?” দৈনিক দেশবাণীকে বলছিলেন মিজ নাসরিন।
এদিকে, জোট ও সমঝোতার পাশাপাশি নিজ দলের মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীদেরকে নির্বাচন করার সুযোগ দিয়ে একটি জমজমাট নির্বাচন দেখাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
এই পরিস্থিতিতে কেমন হতে যাচ্ছে আগামী নির্বাচন?
“আগামী নির্বাচন ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে আলাদা কিছু হবে না”, বলছিলেন নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তার এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি দৈনিক দেশবাণীকে বলেন, “গত দুই নির্বাচনের সাথে এবার কেবল এতটুকুই পার্থক্য যে, আওয়ামী লীগ তাদের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন করার সুযোগ দিচ্ছে।”
শনিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধুর আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সিইসি এমন মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ইসি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে চায় ।এজন্য দেশী পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি বিদেশী পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি আরও বলেন, এই নির্বাচনে বিএনপি এলে আরও গ্রহণযোগ্য হতো। তারা নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে সেটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।
নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে কমিশন সব ধরনের চেষ্টা করবে।
এই সময় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনারও সমালোচনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।