৩২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং দেশিয় বোধ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দাবিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সমাবেশ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে এ সমাবেশ শুরু হয়।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সংগঠনটি প্রথমে শাহবাগ চত্বরে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান করার অনুমতি চেয়েছিল। অনুমতি না পাওয়ায় তারা স্থান পরিবর্তন করে পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে করেন।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং দেশীয় বোধ, বিশ্বাস ও সংস্কৃতির আলোকে জাতীয় শিক্ষাক্রম প্রণয়নের দাবিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের এ সমাবেশ।
দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই মিছিল, স্লোগান এবং ব্যানার ফেস্টুনে মুখরিত হয়ে ওঠে বক্স কালভার্ট রোড।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশ ১৯৭১ সালে ও স্বাধীন হলেও মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে না। স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না। আমরাও চাই এ দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে। এই সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। নির্বাচন জাতীয় সরকারের অধীনে হবে বলেও উল্লেখ করেন।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাঘ ও সিংহের ভূমিকায় অবস্থান করছে, এ মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির ও চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। এই সময় আরো বলেন, সরকার বাঘ-সিংহের মতোই হুংকার দিচ্ছে। কিন্তু ছোট প্রাণীরা যখন এক জোট হয়, তখন বাঘ-সিংহও লেজ গুটিয়ে পালায়। এই সরকারের বিআজ , বৃহস্পতিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।
সম্প্রতি ‘মোড়েলগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমের বক্তব্য চলার সময় পুলিশের বাধা ও অসৌজ্যমূলক আচরণের প্রতিবাদ, ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনপদ্ধতির প্রবর্তন’ এবং বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানের দাবিতে এ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
এই সময় ইসলামী আন্দোলনের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ইসলামী যুব আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল শুক্রবার। সমাবেশে দলের নেতারা জানান, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সমাবেশ করার অনুমতি নেওয়া হয়। পুলিশ সেই অনুমতি বাতিল করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদে দলটি আগামীকাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে।
তিন বলেন আগামীকাল আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম তিনটি সংগঠনকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। কাছাকাছি দূরত্বে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এ ছাড়া গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২–দলীয় জোটসহ বিভিন্ন দল ও জোটও আগামীকাল সমাবেশ করবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন কোনো নির্বাচন হবে না দাবি করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, শান্তিপূর্ণ এবং ঘরোয়া কর্মসূচি পালনেও সরকার বাধা দিচ্ছে। দেশ ক্রমেই সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে। দেশের মানুষের একটাই দাবি, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন। বিদ্যমান সংকট থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় জাতীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
আজ বিএনপি মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিল। সমাবেশের জায়গা নিয়ে পুলিশের আপত্তি থাকায় পরে তা এক দিন পিছিয়ে আগামীকাল করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। সংঘাতে না গিয়ে সমাবেশ পিছিয়ে শান্তির পথ বেছে নেওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ দেন ইসলামী আন্দোলনের আমির।
২৩ জুলাই বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে ইসলামী আন্দোলনের তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা দলের নায়েবে আমির ফয়জুল করিমকে বক্তৃতা করতে বাধা দেন। আজকের সমাবেশে দলের আমির রেজাউল করিম প্রশাসনের এমন আচরণকে অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন তিন ।
ইসলামী আন্দোলন আজ বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেটে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই ট্রাকে মঞ্চ করে সমাবেশ করে দলটি।
দলের মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘আগে শুনতাম ডিজিটাল বাংলাদেশ, এখন শুনি স্মার্ট বাংলাদেশ। আগে শুনতাম জাল ভোট, এখন শুনি রাতের ভোট। প্রবাদ আছে, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে। আওয়ামী লীগেরও ডানা গজিয়েছে। এই সরকার বিদায় না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
সভাপতির বক্তব্যে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইমতিয়াজ আলম বলেন, প্রশাসনের লোকজন জনগণের কর্মচারী, কিন্তু তাঁরা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মচারীর মতো আচরণ করেন। জনগণ ট্যাক্স দিচ্ছে, মশার কামড়ও খাচ্ছে, আবার জরিমানাও দিচ্ছে। কিন্তু দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ মেয়রদের কিছু হচ্ছে না।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানি, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলাম, ঢাকা উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসউদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।