বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতাদের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন ও লেজুড়বৃত্তিক অবস্থানের প্রতিবাদ জানিয়ে একযোগে পদত্যাগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা।
রোববার (২৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ২১ নেতা।
সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন ঢাবি ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আসিফ মাহমুদ। এসময় সাধারণ সম্পাদক আহনাফ সাঈদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুমসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গড়ে ওঠা একটি ছাত্র সংগঠন। কোনো প্রকার দলীয় লেজুড়বৃত্তি না করে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকাই ছিল যার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৮ (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) এর ১নং ধারায় দলীয় দাসত্ব ও লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বাইরে স্বাধীন ধারায় ছাত্র রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি ও ন্যায়সংগত অধিকার আদায়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করার কথা বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ১০-০৭-২০২৩, ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা ও অনুচ্ছেদ ৮ এর ১ নং ধারা লঙ্ঘন করে কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক গণঅধিকার পরিষদের লেজুড়বৃত্তি করার অভিযোগ উত্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। এছাড়াও লিখিত অভিযোগ জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
তিনি আরও বলেন, গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করায়, গঠনতান্ত্রিকভাবে তাদের পদশূন্য হলেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব। অভিযোগ পরবর্তী গত দীর্ঘ দুই সপ্তাহেও কেন্দ্রীয় পরিষদ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র ও ছাত্র সমাজের প্রতি প্রতিশ্রুত আদর্শের বিচ্যুতি ঘটেছে বলে আমরা মনে করি।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, এ অবস্থায় লেজুড়বৃত্তিহীন ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার আদর্শ ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা একযোগে পদত্যাগ করছি।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত তাবাসসুম বলেন, আমরা ছাত্র অধিকার পরিষদ যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলাম। শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা, তাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার থাকা, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণের পক্ষে কথা বলাসহ ইত্যাদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারছি না। যে কারণে আমাদের মনে হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় দুই নেতা তাদের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেনি এবং লেজুড়বৃত্তিক কার্যক্রম বন্ধ করতে পারেনি। সে প্রেক্ষিতে পদত্যাগ করাকেই আমরা সমাধান মনে করছি। তবে আমরা ব্যানার ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলব।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ছাত্র অধিকার পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে ঢাবি শাখার অন্তঃকোন্দল লক্ষ্য করা যায়। কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদিব গণঅধিকার পরিষদে যোগ দিলে তাদের কেন্দ্রীয় পদ শূন্য হয়েছে মর্মে জানতে চায় ঢাবি কমিটির নেতারা।
পরবর্তীতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি ও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সুরাহা করতে চাইলেও কেন্দ্রীয় কমিটির অবহেলা ও সিদ্ধান্ত জানাতে সময়ক্ষেপণ করায় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ঢাবি অধিকার পরিষদের নেতারা।