দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হলেও শেষ মুহূর্তে মারধরের শিকার হলেন ঢাকা-১৭ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম)।
সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেল তিনটার পরে বনানী বিদ্যা নিকেতন কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে মারধরের শিকার হন তিনি।
এদিন সকাল ৮টায় আসনটির উপ-নির্বাচন ছাড়াও ৭৮টি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শেষ হয় বিকেল ৪টায়।
জানা গেছে, হিরো আলম মারধরের শিকারের পরপরই প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন ভবন ছেড়েছেন।
সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভোটকেন্দ্র আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) পরিদর্শনে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
এ বিষয়ে হিরো আলম দৈনিক দেশবাণীকে বলেন, বিকেল ৩টা পর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল কেন্দ্রে নৌকা সামর্থ্য কিছু লোক আমার ওপর হামলা চালায়।
জানা যায়, দুপুরের দিকে তিনি বনানী বিদ্যানিকেতন কেন্দ্রে পরিদর্শনে গেলে বাইরে অবস্থান করা একদল নৌকা সমর্থ্যন প্রার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে চিৎকার করে তাকে মারধর করে।
এর আগে বনানী মডেল স্কুল ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে হিরো আলম বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তার (একতারা প্রতীক) নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া, মারধর করা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেন তিনি।
সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা এক পর্যায়ে কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, জানতে চাইলে হিরো আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন। ডাইরেক্ট বলেতো দিলাম, কে আমার এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে কারা আমাকে মারধর করেছে । ওরা ছাড়া আর আমার এজেন্টদের কে বের করে দিবে?
এসময় আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) তার নিজের ওপর হামলার কথা প্রকাশ করেন। তিনি আরো বলেন, যেহেতু আমার গায়েও হাত দিতে পারে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা , এখন যে আমাকে মেরে ফেলবে না তার কী নিশ্চয়তা আছে?
ভোটের পরিবেশ আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) আরও বলেন, যেহেতু আমার এজেন্ট বের করে দেওয়া হচ্ছে, তাহলে ভোট কীভাবে সুষ্ঠু হয়েছে?
যেখানে আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি, সেখানে ভোটাররা কি করে ভোট দিয়েছে সুস্থ ভাবে? একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে রেখেছিল আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তরা ।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাকে শেষ পর্যন্ত মাঠে থেকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আর আমিও শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আমাদের ওপর কত অত্যাচার করে আজকে, কত জুলুম করে, কীভাবে আমাদের ভোটে ছিনিয়ে নিয়েছে?’
এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হিরো আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মো. ইলিয়াস জানান, প্রত্যেকটি কেন্দ্রে তাদের এজেন্ট দেওয়া হয়েছিল। সব মিলিয়ে ৬২৪ জন এজন্ট দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এরই মধ্যে অন্তত ১০-১২টি কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে।
একই স্থানে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হিরো আলমকে মারধরের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে হিরো আলমের উপরে হামলাকারী দেরকে পুলিশ আটক করেছেন। আটকদের একজন হলেন শেখ শহীদুল্লাহ বিল্পব, তিনি নিজেকে বনানী থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেছেন।
অপর ব্যক্তির নাম সানোয়ার গাজী, তার বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। ডিবির টিম এসে ওই দুইজনকে আটক করে।
সোমবার (১৭ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলের সামনে থেকে তাদের আটক করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া মারামারির ঘটনার সন্দেহজনক হিসেবে তাদের আটক করা হয়েছে। আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এদিকে ঢাকা-১৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে দলীয় প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাত, জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল ইসলাম স্বপন ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের আকবর হোসেন।
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন আলোচিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর আশরাফুল আলম (হিরো আলম) এবং তারিকুল ইসলাম।