পেট্রল পাম্প ধর্মঘট নিয়ে পালটাপালটি অবস্থান নিয়েছে একই অ্যাসোসিয়েশনের দুই পক্ষ। সংগঠনটির একাংশ জ্বালানি তেল বিক্রিতে সাড়ে ৭ শতাংশ কমিশনসহ ছয় দফা দাবি মানা না হলে আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের সব ডিপোর জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। আরেক অংশ বলছে, জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ ঘোষণার হুমকি দেওয়া একাংশের কোনো ভিত্তি নেই।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স ডিস্ট্রিবিউটার্স এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনে দুই পক্ষ পালটাপালটি বক্তব্যও দিচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ঘোষণা দেন অ্যাসোসিয়েশনটির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মিজানুর রহমান রতন। তবে আরেক অংশের সভাপতি মো. নাজমুল হক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, মিজানুর রহমান রতনের নেতৃত্বাধীন অংশের কোনো ভিত্তি নেই। তাদের করা সংবাদ সম্মেলন ‘অবৈধ ও বেআইনি’।
প্রথমে সংবাদ সম্মেলনে এসে অ্যাসোসিয়েশনটির মহাসচিব মিজানুর রহমান রতন বলেন, ‘আমরা দাবি বাস্তবায়নে হরতাল কিংবা ধর্মঘটে কখনই যেতে চাইনি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছি। তিন বছর ধরে দাবি নিয়ে অনেক চিঠি দিয়েছি ও আলোচনা করেছি। অথচ বৈঠক হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। অ্যাসোসিয়েশনের মতামতকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্তে সরকার ডিজেলের বিক্রি কমিশন ২০ পয়সা করা তেল ব্যবসায়ীদের আশাহত করেছে।’
এই একাংশের ঘোষণা করা ৬ দফা দাবিগুলো হলো- জ্বালানি তেল বিক্রির প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ করা, জ্বালানি তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট গেজেট আকারে প্রকাশ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের পেট্রল পাম্পের প্রবেশদ্বারের ভূমির জন্য ইজারা নেওয়ার প্রথা বাতিল করতে হবে, ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতীত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে, মালিকদের প্রিমিয়াম পরিশোধসাপেক্ষে ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের ৫ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বিমা প্রথা চালুর জন্য বিমা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সব জ্বালানি ডিপোসংলগ্ন ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত শৌচাগার ও বিশ্রামাগার নিশ্চিত করতে হবে।
মিজানুর রহমান রতনের নেতৃত্বাধীন একাংশের সংবাদ সম্মেলনের পরই এর বিরোধিতা করে গণমাধ্যমে পালটা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেন নাজমুল হকের নেতৃত্বাধীন আরেক একাংশ। তাতে বলা হয়েছে, ‘যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা এই সংগঠনের কেউ নন। সংবাদ সম্মেলনে যিনি সমিতির সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন (সাজ্জাদুল করিম কাবুল), তিনি তেলের অবৈধ মজুত ও পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দায়ে ২০০৪ সালে অ্যাসোসিয়েশন থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন।’
মিজানুর রহমান রতন সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ধর্মঘট আহ্বান করে সংগঠনকে হেয় করার দায়ে ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ সংগঠন থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।’
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘আমাদের সংগঠন থেকে ইতোমধ্যে সরকারের কাছে তেলের কমিশন বৃদ্ধিসহ অন্য দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়ে আবেদন করেছি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান প্রত্যাশা করি। আলোচনা ব্যর্থ হলে আন্দোলন বা কর্মসূচির চিন্তা করা হবে। সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় না গিয়ে পরিবহণ ধর্মঘট করে জনগণ ও সরকারকে জিম্মি করার পক্ষপাতী আমরা নই।’