রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় সেন্টমার্টিন ট্রাভেলস পরিবহনের বাসের ধাক্কায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজন নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাসের চালক ও হেলপারকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতাররা হলেন- ঘাতক বাসের চালক মো. দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনার (৪০) ও হেলপার কোরবান আলী (৪৫)।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, বেপরোয়া গতি ছিল বাসটির। গতির মধ্যেই ইউটার্ন নিতে গিয়ে সজোরে সিএনজিতে ধাক্কা দেয় চালক। তাতেই ছিটকে পড়ে সিএনজি চালিত অটোরিকশাটি। ঘটনাস্থলেই একই পরিবারের চারজনের মধ্যে মারা যায় তিনজন। আহত হয় সিএনজি চালকও।
শনিবার (২২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় যাত্রাবাড়ী র্যাব-১০ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, গতকাল শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৭টার দিকে যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল টোটাল সিএনজি ফিলিং স্টেশনের বিপরীত পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চট্টগ্রাম দিক থেকে আসা সেন্টমার্টিন ট্রাভেলসের একটি বাস দ্রুত ও বেপরোয়া গতিতে যাত্রীবাহী একটি অটোরিকশাকে সজোরে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়।
এরপর পরিস্থিতি বুঝে বাসটির চালক ও হেলপার ঘটনাস্থল থেকে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই অটোরিকশায় থাকা একই পরিবারের রহমান বেপারী (৬০), মোছা. শারমিন (৩৫) ও সিরাজুল ইসলাম কুদ্দুস (৪০) মারা যান। মোছা. শারমিন ও সিরাজুল ইসলাম কুদ্দুসের কন্যা সন্তান শাকিরা ওরফে বৃষ্টিসহ (৬) অটোরিকশার চালক গুরুতর আহত হন।
স্থানীয়রা আহত শিশু ও অটোরিকশার চালককে মাতুয়াইল শিশু মাতৃসদন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা রোগীদের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাদেরকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।
দুর্ঘটনায় নিহত আব্দুর রহমানের ছেলে বাদী হয়ে গতকালই (শুক্রবার) অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন। মামলা নং-১০০।
দুর্ঘটনার সংবাদ প্রাপ্তির পর থেকে র্যাব-১০ ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দফতর গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় র্যাব-১০ এর একটি দল যাত্রাবাড়ী থানার মিরহাজারিবাগ এলাকা থেকে ঘাতক সেন্টমার্টিন ট্রাভেলস বাসটির হেলপার কোরবান আলীকে (২৫) শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলার সদর থানার চিকার ঘোনা নামক গ্রামে অপর অভিযানে ঘাতক চালক দেলোয়ার হোসেন ওরফে দিনারকে (৪০) গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এনায়েত কবির সোয়েব বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানিয়েছে, বেপরোয়া গতিতে চলছিল বাসটি। ইউটার্ন মোড়ে গতি বেশি থাকায় নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বাসটি। যে কারণে সজোরে ধাক্কা দেয় অটোরিকশায়।
এ সময় বাসচালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া গেলেও সেটি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ।
জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে গ্রেফতার ড্রাইভার ও হেলপার। তাদেরকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।