সরকারি চাকরির আশ্বাস দিয়ে অর্থ আত্মসাৎকারী প্রতারকচক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন হারুনুর রশিদ, মাসুদ রানা ও সেকান্দার আলী। তারা বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির সই জাল করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন।
রোববার হারুনকে কেরানীগঞ্জ থেকে এবং অপর দুইজনকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। সিআইডির দাবি, চক্রটি সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে নিত। পরে সেই টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করত। কারও টাকা ফেরত দিত না।
সিআইডি বলছে, চক্রটি অভিনব কায়দায় বিশ্বাস অর্জন করে চাকরি দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। টাকা আত্মসাতের জন্য তারা ভুয়া নিয়োগপত্র দিত। চাকরির নিশ্চয়তা দিয়ে অগ্রিম টাকা নেওয়ার সময় ভুক্তভোগীর বিশ্বাস অর্জনে তারা ‘ব্ল্যাঙ্ক’ চেক ও ব্ল্যাঙ্ক স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিত।
সোমবার রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত ডিআইজি ইমাম হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পল্টন থানায় একটি মামলার ভিত্তিতে হারুন অর রশীদ ও তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা চাকরি দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছে।
অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারা জাল নিয়োগপত্র দিত। বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির সই জালিয়াতি করে ভুয়া ডিও লেটারও তৈরি করে এরা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস অর্জনের মাধ্যমে প্রতারণা করত। চক্রের মূল হোতা হারুন অর রশীদ। তাকে গ্রেফতারের পর সিআইডি আরও অভিযোগ পাচ্ছে।
সিআইডির কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, হারুন জাল-জালিয়াতি করে মানুষের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করত। তার কাছ থেকে বিভিন্ন জাল নিয়োগপত্র, স্ট্যাম্প, ব্ল্যাঙ্ক চেক উদ্ধার করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, চক্রটির মূলহোতা হারুন অর রশীদের বাড়ি নওগাঁর বদলগাছি থানায়। তার বাবার নাম আবদুল জলিল। তিনি একটি হজ এজেন্সিতে কাজ করতেন। তখন থেকে তিনি এমন প্রতারণার কাজে জড়িয়ে পড়েন। মানুষের আস্থা অর্জনের জন্য তিনি মাঝেমধ্যে জিপ গাড়ি নিয়ে এলাকায় গিয়ে মানুষকে টাকা দান করতেন। পরে তার লোকেরা এলাকায় কাজ করে।
গ্রেফতার সেকেন্দার আলী নওগাঁর মহাদেবপুর থানার দারশা গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং মাসুদ রানা কুড়িগ্রাম জেলার ফুলঝুড়ি থানার কুচি চন্দ্রখানা গ্রামের আবদুল মতিনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির ঢাকা মেট্রো পূর্বের বিশেষ পুলিশ সুপার কানিজ ফাতেমা, অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে এ তিন প্রতারককে গ্রেফতারের খবরে সিআইডি অফিসে ৫-৬ জন ভুক্তভোগী আসেন। তারা হারুনকে বড় মাপের প্রতারক বলেন।
ভুক্তোভোগী রতন জানান, এক খালাতো ভাইয়ের মাধ্যমে হারুনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হারুন মাঝেমধ্যে ফোন দিত। খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে জানাত। রতনের মেয়ের কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়েছে। জামাই চাকরি খুঁজছিল।
হারুন তাকে জানাল, সে খাদ্য অধিদপ্তরে চাকরি দিয়ে দিতে পারবে। মেয়ের শ্বশুরের সঙ্গে আলাপ করেন রতন। ৩০ লাখ টাকায় খাদ্য উপপরিদর্শক পদে চাকরির বিষয়ে হারুনের সঙ্গে চুক্তি হয় তাদের। মেয়ের শ্বশুর তখন বলেন, চাকরি হলে টাকা দেবেন।
রতন বলেন, আমরা শুরুতে তিন লাখ টাকা দিই হারুনকে। কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্টে আমার মেয়ে জামাইয়ের নাম আসেনি। বিষয়টি হারুনকে জানানোর চেষ্টা করি। কিন্তু সে আর ফোন ধরে না। এভাবে ঘোরাতে থাকে। টাকা ফেরত দেয়নি।