কর্মরত অবস্থায় অর্জিত সম্পদের হিসাব দিতে আগ্রহী হচ্ছেন না সরকারি চাকরিজীবীরা। জনপ্রশাসন থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী দাখিলের নির্দেশনার আট মাস পেরিয়ে গেছে।
এরই মধ্যে তথ্য পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহিত করেছে। কিন্তু বেশিরভাগই সাড়া দিচ্ছেন না। অনেক মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট চাকরিজীবীদের কাছে সম্পদের তথ্য চায়নি।
মাঠ পর্যায়ে এমন দুই ধরনের চিত্র সম্পর্কে অবহিত হয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ফলে সম্পদের হিসাব দাখিল নিশ্চিত করতে ফের তাগিদপত্র দিয়েছে মন্ত্রণালয়গুলোকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব বিবরণী আসছে না, এটি আমরা জানতে পেরেছি। সম্প্রতি আমাদের মন্ত্রণালয়ের শুদ্ধাচার বৈঠকে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এরপর সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে এ বিষয়ে তাগিদপত্র দেওয়া হয়েছে।
টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইনগতভাবে সরকারি চাকরিজীবীদের কাছে সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে। যারা দিচ্ছেন না, আইন অমান্য করার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টি এমন নয় যে যা খুশি তাই করলাম। সবাইকে অবশ্যই আইন মানতে হবে। সম্পদের হিসাব না দিলেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে তারা তথ্য দিতে অবেহলা করছেন। ব্যবস্থা নেওয়া হলে অবহেলা করবেন না। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, চাকরিজীবনে আমি তিনবার সম্পদবিবরণী জমা দিয়েছি। এটি দিতে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। প্রতি ৫ বছর অন্তর সরকারি চাকরিজীবীদের এ বিবরণী জমা দিতে হয়।
সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী পাঁচ বছর পরপর সম্পদবিবরণী দাখিলের নিয়ম আছে। ওই আইনের আওতায় এ বিবরণী দাখিলের বিষয়ে গত ২৬ জুন নির্দেশ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সূত্রমতে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক বিভাগ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগ থেকে দেওয়া চিঠির বিপরীতে একজন চাকরিজীবীও সাড়া দেননি।
পরে ৬ জানুয়ারি আরও একটি চিঠি ইস্যু করেছে। আগের দেওয়া নির্দেশনা ও সাড়া না পাওয়ার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে সেখানে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশাসন শাখায় তথ্য পাঠানোর জন্য পুনরায় অনুরোধ করা হয়।
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মালেকা খায়রুন্নেছা জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সম্পদের হিসাব জমার নির্দেশনামূলক চিঠি পেয়ে প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সংযুক্তি দেওয়া হয়েছে। এখন কর্মকর্তারা সম্পদের হিসাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সরাসরি দাখিল করবেন। তবে তার কাছে কেউ সম্পদের হিসাব জমা দেননি।
ভিন্ন কথা জানালেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সমন্বয় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো নির্দেশনা চিঠি আমি পাইনি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সবার সম্পদের হিসাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দাখিল করেছি। সে হিসাব অনুযায়ী এখন আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া হচ্ছে। তবে ২০০৮ সালে কী সম্পদ ছিল আর এখন কী আছে-জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এমন তুলনামূলক চিত্র চাওয়া হলে ভালো হতো। কিন্তু এখানে বর্তমানে কী পরিমাণ সম্পদ আছে, সেটি চাওয়া হয়নি। ফলে অনেকে মনে করছেন, আগে এ ধরনের হিসাব জমা দেওয়া আছে। নতুন করে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এছাড়া প্রতিবছর আয়কর রিটার্নে সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সম্পদের হিসাব দিতে হবে শুনেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন বিভাগ থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। প্রতিবছর আয়কর বিবরণীতে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়া হচ্ছে। ফলে নতুন করে এখানে জমা দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই কারও।