লক্ষ্মীপুরে ৮ বছর ধরে ঝুলে আছে শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা। ২০১৭ সালে তিন বছরের (২০১৪, ১৫, ১৬) সম্মাননার তালিকায় ১৪ জন সাংস্কৃতিক কর্মীকে মনোনীত করা হয়। এদের মধ্যে ৫ জন না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে পর্যন্ত জীবিত এবং মৃত কাউকেই সম্মাননা প্রদান করা হয়নি। মনোনয়নেই ঝুলে আছে তাদের সম্মাননা।
মনোনীত সাংস্কৃতিক কর্মীদের সম্মাননা নিশ্চিত ও এটি নিয়মিত করতে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দের কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে মনোনীত ৭ জন ও প্রয়াতদের প্রতিনিধিরা এ আবেদন করেন।
এদিকে জেলা কালচারাল অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) এইচএমটি কামরান হাসানের বিরুদ্ধে নিয়মিত কার্যালয়ে না আসার অভিযোগ তোলা হয়। তার অনুপস্থিতিতে একাডেমির কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মাসে দু-একদিন তিনি অফিসে আসেন।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবনে র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের অস্থায়ী ক্যাম্প ছিল। চলতি মাসের প্রথমদিকে তারা ক্যাম্প সরিয়ে নেই। এ সময় কার্যালয়টি বুঝে নেওয়ার জন্যও কালচারাল অফিসার আসেননি বলে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক কয়েকজন সদস্য অভিযোগ তুলেছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে সংস্কৃতিচর্চাকারীদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের লক্ষ্যে ‘জেলা শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা’ চালু করা হয়। সারা দেশে ১০টি শাখায় যে কোনো ৫টিতে সম্মাননার প্রচলন শুরু হয়। এর জন্য প্রতিবছর সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে টাকাও বরাদ্দ হচ্ছে।
এর ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে মনোনীত ৫ জনকে তখনকার জেলা প্রশাসক একেএম টিপু সুলতান সম্মাননা প্রদান করেন। এরপর ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ সালের জন্য ১৪ জনকে মনোনীত করেন তখনকার জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহিম চৌধুরী।
২০১৪ সালে মনোনীতরা হলেন- কণ্ঠসঙ্গীতে যদু গোপাল দাস, যন্ত্র সঙ্গীতে রাধেশ্যাম পাটোয়ারী, নাট্যকলায় প্রদীপ কুমার পাল, আবৃত্তিতে এসএম জাহাঙ্গীর, লোকসঙ্গীতে মো. আলী হায়দার পাটওয়রী। ২০১৫ সালে কণ্ঠসঙ্গীতে আলোক কুমার কর, যন্ত্রসঙ্গীতে বেণী মাধব মজুমদার, নাট্যকলায় বিশ্বনাথ সাহা, চারুকলায় নিজামুল ইসলাম ও লোকসঙ্গীতে হোসেন কবিরাজ। ২০১৬ সালে কণ্ঠসঙ্গীতে ফরিদা ইয়াসমিন লিকা, যন্ত্রসঙ্গীতে অঞ্জন দাস, নাট্যকলায় স্বপন চক্রবর্তী ও ফটোগ্রাফিতে বিধু ভূষণ দাস বাচ্চুকে মনোনীত করা হয়।
এরমধ্যে স্বপন চক্রবর্তী যাত্রা শিল্পী হিসেবে মনোনয়নের জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু তাকে নাট্যকলায় মনোনীত করা হয়। এজন্য ২০১৬ সালে ১ জন শিল্পী কম মনোনীত হয়েছেন। মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ নিয়মিত থাকলেও সম্মাননা ঝুলে রয়েছে।
অন্যদিকে তাদেরকে মনোনীত করা হলেও সম্মাননা দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত ৮ বছরে বিভিন্ন সময় সম্মাননার জন্য মনোনীত যদু গোপাল দাস, প্রদীপ কুমার পাল, আলী হায়দার পাটোয়ারী, আলোক কুমার কর ও বিধু ভূষণ দাস বাচ্চু না মারা গেছেন। সম্মাননা স্বাদ তারা গ্রহণ করতে পারেননি।
এছাড়া বাকি ৯ জনের মধ্যে রাধেশ্যাম পাটোয়ারী ও স্বপন চক্রবর্তী বয়সের ভারে নুইয়ে পড়েছেন। তাদের জীবদ্দশায় সম্মাননা নিশ্চিত করতে শিল্পকলা একাডেমির সদস্যরা দাবি তুলেছেন।
মনোনীত শিল্পী এসএম জাহাঙ্গীর বলেন, দেশের ৬৩ জেলায় নিয়মিত শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা পাচ্ছেন স্ব স্ব এলাকার শিল্পীরা। কিন্তু লক্ষ্মীপুরে ৮ বছর ধরে কাউকেই সম্মাননা দেওয়া হচ্ছে না। ১৪ জনকে মনোনীত করা হলেও এখনো সম্মাননা বঞ্চিত। এরমধ্যে ৫ জনই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়ে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। এ সম্মাননাটুকু জীবদ্দশায় সকল কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। মনোনীতদের সম্মাননা নিশ্চিত ও এটি নিয়মিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
ফেনী জেলা কালচারাল অফিসার ও লক্ষ্মীপুরে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত এইচএমটি কামরান হাসান বলেন, করোনার শুরু মাঝামাঝি সময়ে আমি লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব পাই। তখন আমি নোয়াখালীতে কর্মরত ছিলাম। দায়িত্ব পাওয়ার পর শিল্পকলা একাডেমি সম্মাননা নিয়ে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা হয়। করোনার কারণেই তা স্থগিত রয়েছে। খুব শিগগিরই তা চালু করা হবে। মনোনীত যারা সম্মাননা না পেয়ে মারা গেছেন তাদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, র্যাব যখন ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। তখনকার ডিসি তাদেরকে শিল্পকলা একাডেমি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন। ক্যাম্প সরিয়ে নেওয়ার সময় তারা ফের ডিসির সঙ্গেই যোগাযোগ করবেন। আমাকে ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলে, অবশ্যই তারা আমাকে অবহিত করতেন। কিন্তু র্যাব থেকে তা করা হয়নি। আর আমি ফেনীতে কর্মরত। লক্ষ্মীপুরে অতিরিক্ত দায়িত্ব, এজন্য সেখানে নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না।