সশস্ত্র বাহিনী জাতির আস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দুর্যোগ মোকাবিলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আর্তমানবতার সেবা, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং জাতি গঠনমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছেন। এভাবে সশস্ত্র বাহিনী আজ জাতির আস্থার প্রতীক হিসাবে গড়ে উঠেছে।’
‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ উপলক্ষে শনিবার এক বাণীতে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর একটি বিশেষ গৌরবময় দিন। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অকুতোভয় সদস্যরা এ দিনে সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে পালটা আক্রমণের সূচনা করেন। মুক্তিবাহিনী, বিভিন্ন আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য ও দেশপ্রেমিক জনতা এ সমন্বিত আক্রমণে একতাবদ্ধ হন। দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস’ পালন করা হয়
প্রধানমন্ত্রী সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সব সদস্যকে দিবসটি উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের সব বীর শহিদ এবং মাতৃভূমির জন্য জীবন উৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সব শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, সাহসী এবং ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে মহান স্বাধীনতা অর্জন করে। জাতির পিতা স্বাধীনতার পর একটি আধুনিক ও চৌকস সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সেনাবাহিনীর জন্য তিনি মিলিটারি একাডেমি, কম্বাইন্ড আর্মড স্কুল ও প্রতিটি কোরের জন্য ট্রেনিং স্কুলসহ আরও অনেক সামরিক প্রতিষ্ঠান এবং ইউনিট গঠন করেন। তিনি চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ঘাঁটি ঈসা খাঁ উদ্বোধন করেন। বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৎকালীন যুগোশ্লাভিয়া থেকে নৌবাহিনীর জন্য দুটি জাহাজ সংগ্রহ করা হয়। বিমানবাহিনীর জন্য তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে সুপারসনিক মিগ-২১ জঙ্গি বিমানসহ হেলিকপ্টার, পরিবহণ বিমান ও রাডার সংগ্রহ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সেনা, নৌ এবং বিমানবাহিনীকে দেশে ও বিদেশে উন্নততর প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি। জাতির পিতার নির্দেশে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের উপযোগী ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতিমালার আলোকে ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আওতায় তিন বাহিনীর পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের কার্যক্রমসমূহ পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তিনি আশা করেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাবেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস-২০২১’ এ গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।