কবুতরকে বলা হয় শান্তির প্রতীক। প্রাচীন যুগে রাজা-বাদশারা কবুতরের পায়ে বার্তা বেঁধে দিতেন। বলা যায়, তখন বার্তা বাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করা হতো। অন্যদিকে, রোগীর পথ্য হিসেবেও কবুতরের মাংসের জুড়ি নেই। শখের বসে অনেকে কবুতর পালন করে সফল হয়েছেন। সৌখিন কবুতর৷ প্রেমী অনেকের সফলতা বলার মতোই। সে রকমই একজন নাটোরের সিংড়া উপজেলার আদিমপুর গ্রামের মো. আবু সাইদ। বয়স ৭০ এর কোঠায়।
শুরুটা ১০ জোড়া কবুতর দিয়ে হলেও এখন তার কবুতরের সংখ্যা সাড়ে ৩০০ জোড়া ছাড়িয়ে গেছে। পাঁচ বছর আগে শুরু করা শখে কবুতর পালন এখন আর শখে সীমাবদ্ধ নেই, পরিণত হয়েছে পেশায়। খরচ বাদে বর্তমানে তার মাসিক আয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
তাঁর খামারে রয়েছে ইন্ডিয়ান ফান্টেল, লাহোর কালো, হলুদ, তুরিবাজ লাল,কালো, এলমন্ড, ইন্ডিয়ান নোটন, দেশি লোটন, বাশিরাজ কোকা, মাক্সি রেচার হুমা, সবজে গিরিবাজ, লাল,সাদা, হলুদ বোম্বাই, আমেরিকান সো কিং, কালদম, মুক্ষি লাল, হলুদ, কালো, সিলভার, কফি, ঝরনা শাটিন, ল্যাভেন্ডার সুয়া চন্দন, শেকড়সহ ৩০ প্রজাতির কবুতর।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে ২৩ হাজার টাকায় ১০ জোড়া কবুতর দিয়ে তাঁর খামার শুরু। তারপরে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। বসতভিটায় ৮৪ ফিট লম্বা ও ১৯ ফিট চওড়া এ খামার দেখাশুনার পাশাপাশি ১৯ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন তিনি। এছাড়াও ৫টি পুকুরে মাছ চাষ করেন। বাড়ির আঙিনায় আম, বড়ই, তাল, কলাসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির ফল গাছ রয়েছে তাঁর। আবু সাইদকে দুজন শ্রমিক এসব দেখাশুনার কাজে সহযোগিতা করেন। খামার থেকেই বেশি কবুতর বিক্রি হয়, এছাড়াও ঢাকা, গাজীপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও খামারীরা এসে কবুতর ক্রয় করে নিয়ে যায়। তাঁর খামারে কবুতরের সর্বনিম্ন দাম ৩ হাজার টাকা জোড়া ও সর্বোচ্চ দাম ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত । আবু সাইদের খামার দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে খামার করেছেন একই গ্রামের আবুল হাশেম, পাশের গ্রাম বিয়াশের উজ্জল, সাইফুল ইসলাম, দুলাল, আঃ আজিজ, কাউসার আহমেদ ও বুলবুল আহমেদ।
আবু সাইদের সৌখিন খামার সরেজমিনে পরিদর্শন করেন সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিরুল ইসলাম, সহকারি কমিশনার (ভূমি) রকিবুল হাসান, উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরসিদ আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আল-আমিন সরকার।
খামারী আবু সাইদ জানান, একসময় শুধু শখের বসে পালন করা গেলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বর্নিভর হতে পারে। সবসময় এসব প্রজাতির চাহিদা থাকে। সরকারি সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে বছরে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। কবুতরের অসুখ হলে তিনি নিজেই চিকিৎসা করেন। ছোটবেলা শখের বসে কবুতর পালন করতেন, সেই শখ এখন পেশায় রুপ নিয়েছে।
আবু সাইদের ভাতিজা সিংড়া ডায়বেটিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, আমার চাচা একসময় শখের বসে কবুতরের খামার শুরু করলেও এখন তিনি সফল খামারী। তিনি নিজ হাতে সবকিছু দেখভাল করেন। এরকম প্রাকৃতিক পরিবেশে আমরা মুগ্ধ।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা এস এম খুরসিদ আলম জানান, আবু সাইদ একজন সফল খামারি। আমি তাঁর খামার পরিদর্শন করেছি, খুবই ভাল লেগেছে। এছাড়াও এ উপজেলায় শতাধিক কবুতর খামারি রয়েছে। তাদেরকে আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি। খামারীরা চাইলে আমরা সকল প্রকার পরামর্শ ও সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম এম সামিরুল ইসলাম বলেন, আমি নিজেও একজন কবুতর প্রেমী। ২০০০ সাল থেকে কবুতর পালন করি। আবু সাইদের খামার দেখে আমি মুগ্ধ। এটি সিংড়া উপজেলার সবচেয়ে বড় কবুতর খামার। বর্তমানে কবুতর পালন অপার সম্ভাবনার,এর মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়।
আরও পড়ুন...