করোনা মহামারির জন্য গত বছর দেশের মানুষের প্রাণের মেলা ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রথা অনুসারে ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ফের শুরু হচ্ছে। তবে এবার রাজধানীর আগারগাঁও নয়, উত্তরার পূর্বাচলে নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে’। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথি হিসেবে এই ভেন্যুর শুভ উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইপিবি এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গতকাল মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ২১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী দেশের সেরা বিশ্বমানের এ প্রদর্শনী সেন্টার উদ্বোধন করবেন। এতে করে দেশের মানুষের দীর্ঘদিনের চাওয়া একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী সেন্টারের আশা পূরণ হচ্ছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে স্থায়ী এই প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এর ফলে কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়, এবার বছরজুড়ে মেলার আয়োজন করা যাবে। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এই প্রদর্শনীতে মেলার আয়োজন করতে পারবেন।
প্রতিবছর ১ জানুয়ারি শুরু হওয়াটা একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। করোনা মহামারির কারণে এবার তাতে ছেদ পড়েছে। বরাবরের ভেন্যু শেরেবাংলানগর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নতুন ঠিকানায় বসতে যাচ্ছে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর। পূর্বাচলে ঢাকা বাণিজ্য মেলা আয়োজনে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার। ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্বাচলে ২০ একর জমির ওপর বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণ হয়েছে।
জানা যায়, এক্সিবিশন সেন্টার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর নতুন এই ভেন্যুতে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসর আয়োজনে পুরোদমে মাঠে নামবে আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইপিবি। বিগত ১৯৯৫ সাল থেকে শেরেবাংলানগরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার একে একে ২৫টি আসর বসেছে।
উন্নত বিশ্বে স্থায়ী অবকাঠামোতেই মেলা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়ে থাকে। শেরেবাংলানগরে অস্থায়ী মাঠে যে মেলার আয়োজন হয়ে আসছিল সেখানে স্টল প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করতে গিয়ে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হতো। মেলার ভেন্যু পূর্বাচলের স্থায়ী ঠিকানায় যাওয়ায় সেই সমস্যার সমাধান হচ্ছে। তা ছাড়া এই মেলার কারণে শেরেবাংলানগর, আগারগাঁও, শ্যামলীসহ আশপাশের সড়কগুলোতে মাসজুড়ে যানজট লেগে থাকত। সেই সমস্যারও সমাধান মিলছে।
ইপিবি সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালে এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের জন্য চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম ডিজাইন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণের প্রথম ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২০০৯ সালে, পুরনো বিমানবন্দরের প্রায় ৪০ একর জমি নিয়ে তা কার্যকর হয়নি। প্রধানমন্ত্রী পূর্বাচলে এক্সিবিশন সেন্টারের স্থান নির্বাচনের নির্দেশনা দেন। পরে ২০১৫ সালের ১৮ মার্চ রাজউক প্রথম পর্যায়ে ২০ একর জমি বরাদ্দ দেয়। চীনা কর্তৃপক্ষ নির্মাণকাজ শুরু করে ২৬ অক্টোবর ২০১৭। কাজ শেষ হয় ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর। নির্মিত অবকাঠামো চীনা কর্তৃপক্ষ ইপিবিকে বুঝিয়ে দেয় ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি।
এক নজরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার
এক্সিবিশন হলের মোট আয়তন ১৫ হাজার ৪১৮ বর্গমিটার। এতে দুটি প্রদর্শনী হল রয়েছে। প্রতিটির আয়তন সাত হাজার ১৮৩ বর্গমিটার এবং রেজিস্ট্রেশন হলের আয়তন এক হাজার ৫২ বর্গমিটার। ৫৩৮ কোটি টাকায় নির্মিত এই এক্সিবিশন সেন্টারের দোতলায় ৫০০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এক্সিবিশন বিল্ডিংয়ের সামনের খোলা জায়গায় আরো এক হাজার গাড়ি পার্কিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। এক্সিবিশন হলে ৯.৬৭ বর্গমিটারের ৮০০ বুথ ছাড়াও ৪৭৩ আসনবিশিষ্ট একটি মাল্টি ফাংশনাল হল; ৫০ আসনবিশিষ্ট একটি কনফারেন্স রুম; ছয়টি মিটিং রুম, ৫০০ আসনবিশিষ্ট ক্যাফেটেরিয়া/রেস্টুরেন্ট, শিশুদের খেলার স্পেস, নামাজ কক্ষ, অফিস রুম দুটি, মেডিক্যাল সেন্টার, ডরমেটরি, ১৩৯টি টয়লেট, নিজস্ব ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, ইনবিল্ট ইন্টারনেট/ওয়াই-ফাই, আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা এবং ১৩৭টি সিসি ক্যামেরা থাকছে।