রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হলে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে (ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয়) শান্তি ফিরবে না বলে অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি। তাঁর বিশ্বাস, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের চিত্র বদলে যাবে। এ ছাড়া কভিড মোকাবেলায় জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে আরো টিকা সহায়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে গতকাল বৃহস্পতিবার কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাব আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে এসব বিষয়ে কথা বলেন জাপানি রাষ্ট্রদূত। রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, আগামী মাসে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জাপান থেকে বাংলাদেশে টিকা আসতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে তা বলা খুব কঠিন। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসন খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাপান মিয়ানমারের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা অব্যাহত রাখবে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে জাপান মিয়ানমারকে সরাসরি চাপ দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও মিয়ানমারকে চাপ দেওয়া উচিত।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগীদের অন্যতম দেশের এই রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের একাংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরে বাংলাদেশের চেষ্টা সফল হবে বলে তিনি মনে করেন।
ইতো নাওকি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জিত হবে না। তবে তিনি এ-ও বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহায়ক পরিবেশ থাকা জরুরি। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় জাপান ১৫ কোটি ডলার সহায়তা দিয়েছে। প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া সহজ করতে মিয়ানমারের রাখাইনেও তাঁর দেশ ছয় কোটি ৪০ ডলার সহায়তা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকারের কভিড ব্যবস্থাপনাকে বাংলাদেশের চমৎকার সাফল্য বলে উল্লেখ করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘এটি সত্যিই চমৎকার এক অর্জন। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রচেষ্টা ও অর্জন চমৎকার।’
জাপান বাংলাদেশে ৩০ লাখ ডোজেরও বেশি অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা সরবরাহ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ওই টিকাগুলো ভালোভাবেই এ দেশের কাজে লেগেছে। কভিড সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরো সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
বাংলাদেশে বড় পরিসরে জাপানের বিনিয়োগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে বড় ধরনের রূপান্তর ঘটবে। এর ফলে এ দেশের অবকাঠামোর চিত্র অনেক বদলে যাবে। চলমান জাপানি প্রকল্পগুলো নিয়ে তিনি বলেন, মাতারবাড়ী শুধু বাংলাদেশের নয়, এ অঞ্চলের স্বপ্ন। এটি এ অঞ্চলের অন্যতম ‘পাওয়ার হাব’ (শক্তির কেন্দ্র) হিসেবে কাজ করবে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বেশির ভাগ বড় প্রকল্পে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা কঠিন হয়ে পড়ে। জাপানের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে বেশি সময় লাগে। কিন্তু সব সময় উন্নত মানের কাজ হয়। প্রকল্পের সময়, বাজেট এবং গুণগত মান রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রদূত নাওকি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশে জাপানি সরাসরি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বাড়বে। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের বাস্তবধর্মী সহযোগিতা বাড়াব।’
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, জাপান এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার হতে যাচ্ছে।
বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানের অনেক অগ্রগতি হয়েছে মন্তব্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এর পেছনে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা এবং সামাজিক উন্নয়ন বড় ভূমিকা রেখেছে।
ইতো নাওকি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০০ জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার অর্থনৈতিক অঞ্চলে (জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চলে) শতাধিক জাপানি কম্পানি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য যে কারো কাছ থেকেই ঋণ নিতে পারে। তবে তা যেন টেকসই ও স্বচ্ছ হয় এবং বাংলাদেশের কাজে লাগে তা বিবেচনা করা উচিত।
ডিক্যাব সভাপতি পান্থ রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মঈনুদ্দিনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।