নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আবারও এক সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করেছেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা অনুসারীরা। গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটায় বসুরহাট মোশারফ হোসেন ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহত সাংবাদিকের নাম মো. নাসির উদ্দিন (৪৩)। তিনি ঢাকা প্রতিদিন ও নোয়াখালী প্রতিদিন পত্রিকার কোম্পানীগঞ্জে প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। হামলার পর স্থানীয় লোকজন আহত অবস্থায় নাসির উদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর নিরাপত্তার কারণে তিনি অন্য স্থানে ঠাঁই নিয়েছেন।
আহত নাসির উদ্দিন বলেন, গতকাল সন্ধ্যার দিকে বসুরহাট পৌরসভার দক্ষিণ গেটের মোশারফ হোসেন ডায়াবেটিক হাসপাতালের সামনে একটি চা–দোকানে তিনি বসে ছিলেন। এ সময় দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হন আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ অনুসারী পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্লাহ। ফেসবুকে একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হামিদ উল্লাহর সঙ্গে থাকা ১০ থেকে ১২ জন সহযোগী তাঁকে (নাসিরকে) পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন। নাসির আরও বলেন, ‘কোম্পানীগঞ্জে কারও ওপর হামলা চালাতে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ লাগে না। হামলার কিছুক্ষণ পর হামিদ ফোন করে ঘটনার জন্য ভুল স্বীকার করেছেন।’
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, চায়ের দোকানে বসে ছিলেন সাংবাদিক নাসির। কাদের মির্জার ঘোষিত বসুরহাট পৌরসভা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ উল্লাহ ওরফে হামিদের নেতৃত্বে তাঁর অনুসারীরা রিকশার চেইন, ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে নাসিরকে পিটিয়ে আহত করেন।
নাসির উদ্দিনের ওপর হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন হামিদ উল্লাহ। আজ সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নাসিরসহ অন্য সব সাংবাদিকের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই হামলার প্রশ্নই ওঠে না। তবে তিনি শুনেছেন সাংবাদিক নাসির মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, নাসির উদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনা তিনি শুনেছেন। তবে নাসির উদ্দিন এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কয়েক মাস আগে কোম্পানীগঞ্জে আওয়ামী লীগের আবদুল কাদের মির্জা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব-সংঘাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তরুণ সাংবাদিক বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। চার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করেন কাদের মির্জার অনুসারী। হামলার শিকার হয়েছেন একাধিক সাংবাদিক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোম্পানীগঞ্জের অনেক সাংবাদিককে এখন সচরাচর বসুরহাটে দেখা যায় না। হামলার আশঙ্কায় কেউ কেউ রাতে ঠিকমতো বাড়িতে ঘুমান না।