ফরিদ আহম্মেদ সরিষাবাড়ি( জামালপুর)প্রতিনিধিঃ: চোর সন্দেহে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ি উপজেলার একুশে মোড়ে গত ২৩.০৯.২০২১ তারিখে সন্ধ্যা ৬ ঘটিকায় একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলে কে নির্মম ভাবে মারধর করা হয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি নিয়ে ময়মনসিংহ জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন মারধরের শিকার রাসেল। অন্যায়ভাবে রাসেল কে মারধর করার কারনে তার পিতা প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবী করেন।
রাসেল উপজেলার পোগলদিঘা গ্রামের মোঃ শুক্কুর আলীর সন্তান। পরিবারের তিন ভাই বোনের মধ্যে রাসেল প্রথম সন্তান। জন্মলগ্ন থেকে রাসেল তার পরিবারে সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত রাসেলের কোন সমস্যা ছিলো না, যার ফলে সে বয়ড়া ইসরাইল আহাম্মদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরবর্তীতে ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে রাসেল তার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। তার বাবা পেশায় একজন ভ্যানচালক তারপরও তার ছেলে কে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে তার সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত তার চিকিৎসার জন্য প্রায় ৫-৬ লক্ষ টাকা খরচ করছেন যা তার মতো একজন সামান্য ভ্যান চালকের খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এ অবস্থায় ও সে তার অসুস্থ ছেলে কে ফেলে দেননি, তার ধারণা আমার ছেলে আবার সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। এই ধারণা থেকেই রাসেল কে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রেখেছে তার অসহায় বাবা।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন মানসিক ভারসাম্যহীন রাসেল ৪ টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রাসেল তার বাড়ির রাস্তা ধরে বয়ড়া বাজার হয়ে দিক ভূলে একুশে মোড়ের দিকে চলে যায়,একুশে মোড়ে এসে সে এলোপাতাড়ি ভাবে কয়েকটি দোকানের সামনে ঘোরাঘুরি করেন। পরবর্তীতে রাসেল ফিরোজ ম্যাকানিকের দোকানের সামনে রাখা মোটরসাইকেলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে তাকে কোন কিছু সম্পর্কে না জিজ্ঞেস করে দোকানদার ফিরোজ লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে রাসেল কে বেধরক মারধর শুরু করেন,এ অবস্থায় আশেপাশের আরও দোকানদার সম্মিলিত ভাবে রাসেল কে মারধর করেন। ঘটনাটি শোনার পর রাসেলের পিতা শুক্কুর আলী ঘটনাস্থলে গেলে উনাকেও মারধর করেন। তিনি স্থানীয় লোকজন কে বলেন যে আমার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন সে চোর না তারপরও তারা মারধর করেন। পরে তারাকান্দি তদন্ত কেন্দ্র থেকে এস আই ফয়জুর মাসুম এসে দেখেন রাসেল কে তার পিতা সরিষাবাড়ি উপজেলা হাসপাতালে চলে গেছেন। রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে সরিষাবাড়ি থেকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। জামালপুরে ৫ দিন অবস্থানের পর কিছুটা উন্নতি হলে রাসেল কে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রাসেলের অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে ৩০ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে রাসেল আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে,তাকে বেধরক মারধরের কারনে তার বুকের হাড় ভেঙ্গে গেছে।
ঘটনার সুষ্ঠ বিচারের দাবীতে রাসেলের পিতা বাদী হয়ে ২৫.০৯.২১ তারিখে সরিষাবাড়ি ওসি বরাবর,প্রাধান আসামী শিপন মিয়া, পিতাঃরফিকুল ইসলাম, ফিরোজ, হৃদয় পিতাঃমৃতঃহাবিবুর রহমান, স্বাধীন পিতাঃরফিকুল ইসলাম,ইলিয়াস পিতাঃআব্দুল আজিজ সহ ১৫/২০ জন কে অভিযুক্ত করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
বিষয়টি নিয়ে সরিষাবাড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মীর রকিবুল হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান,আমরা একটি অভিযোগ গত ২৫.০৯.২১ তারিখে পেয়েছি, অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনা স্থলে এএসআই আলী হাসান পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সত্যতা পান। তবে বাদী পক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের উপস্থিতি না থাকার কারনে বিষয়টি স্থগিত থাকে। তবে আমরা ভুক্তভোগী পরিবার যেন সঠিক বিচার পায় সে ব্যবস্থা করব এবং আসামিরা যেন পরবর্তীতে এ ধরনের কোন ঘটনা না ঘটাতে পারেন সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।