মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতিতে নষ্ট হলো গণটিকার ৫ ভায়েল (২৫ ডোজ) করোনার টিকা। গণটিকার ৬ দিন পর সোমবার পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্র থেকে নষ্ট ভ্যাকসিন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ। তারা বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করে। পরে জানাজানি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার নিজের দায় স্বীকার করে স্বাস্থ্য বিভাগের ইপিআই কর্মীর বাবার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিষয়টি সংবাদ না করার অনুরোধ করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে গণটিকার ১ম পর্যায়ে ১০ হাজার ডোজ টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে ২০০ ডোজ করে টিকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তারের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৯ ওয়ার্ডের সুপারভাইজারের দায়িত্ব পান সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক (এইচ আই) আব্দুল আউয়াল।
পৌরসভার ৮টি ওয়ার্ডে ২০০ জন করে টিকা পেলেও ৮নং ওয়ার্ডে টিকা পান ১৭৫ জন। ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে টিকা কেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়। বরাদ্দকৃত ২ শত ডোজ টিকার ২৫ ডোজ রয়ে যায়। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বরত সুপারভাইজার আব্দুল আউয়াল ২৫ ডোজ টিকা ফিরিয়ে না আনায় সেগুলো সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। ৬ দিন পর স্থানীয় কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী ছোহেল তাঁর কার্যালয়ে ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বক্স পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি বিষয়টি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তারকে অবগত করেন। সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার বক্সে নষ্ট হয়ে যাওয়া ৫ ভায়েল ২৫ ডোজ করোনার টিকা ও সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর আতাউর রহমান চৌধুরী ছোহেল জানান, মঙ্গলবার ৮নং ওয়ার্ডে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ আমার কার্যালয়ে গণটিকার অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম শেষে টিকার বাক্স, টিকাদানের প্রয়োজনীয় তথ্যর কাগজাদি ফেলে রেখে যান। রবিবার রাতে বিষয়টি আমি কর্তৃপক্ষকে অবগত করলে তারা সেগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যান।
টিকা কার্যক্রমের সুপারভাইজারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমার দায়িত্ব শুধু টিকা কার্যক্রম সুষ্ঠু হচ্ছে কি না সেটা দেখার। বিকেলে খবর পেয়েছি ওই ওয়ার্ডে ১৭৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে টিকা বাকি রয়েছে কি না সেটা জানতাম না। রবিবার রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরেছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফেরদৌস আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের ভুলবশত হয়ে গেছে। ইচ্ছে করে তো কেউ রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করতে চায় না। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
মৌলভীবাজার জেলা সিভিল সার্জন চৌধুরী জালাল উদ্দিন মোর্শেদ সোমবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিষয়টি অবশ্যই দায়িত্বহীনতা। অবহেলা ও গাফিলতির জন্য টিকাগুলো নষ্ট হলো। ওই ঘটনায় টিকা আদানপ্রদানকারী পোর্টারকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য বলেছি এবং একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছি। তদন্তপূর্বক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত ব্যবস্থা নিবো।’