আজ ৪ আগস্ট, পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনার সাত বছর পূর্ণ হলো। ২০১৪ সালের এই দিনে কাওড়াকান্দি-মাওয়া নৌরুটে মাঝপদ্মায় কমপক্ষে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায় লঞ্চটি। সে সময় ঈদের ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। অতিরিক্তি যাত্রী নেয়ার কারণে লঞ্চটি ডুবে প্রাণ যায় বহু মানুষের। আজও পিনাক ট্র্যাজেডির কথা মনে পড়লে আতকে ওঠে মানুষ।
সরকারি হিসাবে ওই দুর্ঘটনায় ৪৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও বেসরকারিভাবে ৮৬ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানানো হয়। সাঁতরে ও অন্যদের সহযোগিতায় জীবিত উদ্ধার হয় অনেককে। নিখোঁজ হন আরও ৫০ জন, যাদের খোঁজ আজও মেলেনি। এর মধ্যে আবার অজ্ঞাতনামা হিসেবে ২৮ মরদেহের ঠাঁই হয় শিবচর পৌর কবরস্থানে।
জানা যায়, ২০১৪ সালের ওই সময়টা ছিল ঈদের ছুটি। প্রতিবছর ঈদের ছুটিতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে যান অনেকে। আবার ঈদ শেষে যে যার কর্মস্থলে ফিরে যান। কিন্তু ওই বছর আর ফেরা হয় না অনেকের। লঞ্চডুবিতে ঝরে যায় অনেক প্রাণ। এ কারণে ঈদ আসলেই পিনাক ডুবিতে নিহতদের স্বজনদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। হারানো বেদনা নতুন করে ব্যথা বাড়িয়ে দেয় ক্ষতকে। বছরের এই সময়টায় স্বজন হারানো শিবচরের ১২ থেকে ১৪টি পরিবারে নতুন করে জেগে ওঠে স্বজন হারানোর বেদনা।
জানা গেছে, কোনো কোনো একমাত্র বাবা-মা সন্তান ও উপার্জনকারীকে হারিয়ে আজ অসহায়। কষ্ট-দারিদ্র্য নিয়ে বেঁচে আছেন তারা। মাদারীপুর জেলার শিবচরে স্বজন হারানো কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে দেখা যায়, নিরব-নিস্তব্ধ বাড়ির চারপাশ জুড়ে যেন বিষাদের ছায়া।
স্বজনরা জানান, পাঁচ্চর ইউনিয়নের লপ্তেরচর এলাকার মিজানুর রহমান স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ লঞ্চ ডুবিতে মারা গেছেন। এমনই আরেকটি পরিবার রয়েছে উপজেলার সন্যাসীচর ইউনিয়ের দৌলতপুর গ্রামে। ঢাকায় ফেরার পথে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মারা যান ফরহাদ মাতুব্বর। তার শ্যালকও মারা যান এই দুর্ঘটনায়। যাদের মরদেহও শেষ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
শিবচর পৌর মেয়র আওলাদ হোসেন খান বলেন, ‘পিনাক-৬ ডুবির পর উদ্ধারকৃত যেসব মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি সেসব মরদেহ পৌর কবরস্থানে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে দাফন করা হয়। তবে এ পর্যন্ত মরদেহের খোঁজে কেউ আসেনি।’
শিবচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পিনাক-৬ ডুবিতে অনেকেই মারা গেছেন। নিখোঁজও হয়েছেন প্রায় অর্ধশত মানুষ। যেসব মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচলে কঠোর রয়েছে প্রশাসন। আমরা সবসময়ই লঞ্চমালিক ও শ্রমিকদের নির্দেশ দিয়েছি যেন অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চ চলাচল না করে। নিয়মিত লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামসহ লাইফ জ্যাকেট, বয়া লঞ্চে রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিয়মিত মনিটরিং করছি।’