জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ কথা চিন্তা করেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট।
এজন্য ৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে প্রকল্পটি।
বৈঠকে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
প্রকল্পটির অনুমোদন প্রক্রিয়াকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম।
তিনি পরিকল্পনা কমিশনে মতামত দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে জন্মগত হৃদরোগীসহ অন্যান্য শিশু হৃদরোগীর জন্য শিশু কার্ডিয়াক ইউনিট সম্প্রসারণ এবং শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হবে।
ফলে উন্নত বিশ্বের অনেক চিকিৎসাই বিএসএমএমইউতে নতুনভাবে চালু করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরিতেও প্রকল্পটি অবদান রাখবে।
সূত্র জানায়, দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ শতাংশের বয়স ১৪ বছর বা এর চেয়েও কম। নিরক্ষরতা, দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা, স্বাস্থ্যকর পরিবেশের অভাবসহ প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা না থাকায় শিশু হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উন্নত বিশ্বে প্রতি হাজারে ৬-৭ জন শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয়।
বাংলাদেশে সেখানে প্রতি হাজারে ২৫ শিশু জন্মগত হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নেয় বলে দাবি করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে জন্মগত হৃদরোগী প্রায় ৩ লাখ, যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।
দারিদ্র্যের কারণে সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে না পারায় এবং সময়মতো সার্জারিসহ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সূত্রমতে, আধুনিক বিশ্বে অস্ত্রোপচার ছাড়া হৃদরোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার করার প্রবণতা বেশি। অস্ত্রোপচার ছাড়া ভাল্ব প্রতিস্থাপন, সরু ভাল্ব বড় করা, রিং বসানোর মাধ্যমে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু জন্মগত হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগীর সার্জারির প্রয়োজন হয়। সঠিক বয়সে, সঠিক সময়ে যদি সার্জারি করা না হয় তবে ওই রোগীরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না।
বিএসএমএমইউতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে যথাযথভাবে এসব রোগীর সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে পূর্ণবয়স্ক রোগীদের সার্জারির জায়গায় শিশুদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেখানে শিশুদের জন্য ন্যূনতম ৫০টি বেড থাকা প্রয়োজন, সেখানে ১৫টি বেড দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ শিশু কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।
প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে : বিএসএমএমইউ-এর অনাবাসিক ভবন এফ ব্লকের অষ্টম ও নবম তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। এছাড়া ৫৯১টি চিকিৎসা ও শল্যচিকিৎসা সরঞ্জামাদি, ৫২৮টি মেডিকেল যন্ত্রপাতি, ৬৪টি কম্পিউটার, ১ হাজার ১৩১টি আসবাবপত্রসহ একটি অটোমেশন সফটওয়্যার কেনা হবে। সূত্র জানায়, ২১ জানুয়ারি এ প্রকল্পটি নিয়ে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ব্যয় কমানোর কথা বলা হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের প্রধান ও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা নির্মাণ ব্যয় কমানো এবং অন্যান্য ব্যয় যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ দেন। ফলে প্রস্তাবিত ব্যয় ৭৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা থেকে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা কমানো হয়। এখন প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২ কোটি ৯ লাখ টাকা।