নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও দ্রুত এগিয়ে চলছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ। কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন চলছে সেতুর সড়ক পথে পিচঢালাইয়ের (কার্পেটিং) কাজ। জাজিরা প্রান্তের ৪১ নম্বর স্প্যান থেকে ৩৭ নম্বর স্প্যান পর্যন্ত রোডওয়ে স্ল্যাব, প্যারাপেট ওয়াল এবং রোড ডিভাইডার বসানো হয়েছে। এই সড়কটুকুতে বাতি ছাড়া প্রায় সব কাজই শেষ।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সেতুর ৪০ নম্বর স্প্যানের উপরের সড়কে পিচ ঢালাইয়ে কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে এই স্প্যানের উপরের সড়কে ১০ মিটার প্রস্থ এবং ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের ওয়াটার প্রুফ মেমব্রেন বিছানো হয়েছিল। যেটি পানি নিরোধক একটি প্রলেপ। তার উপরের পিচ ঢালাই করা হচ্ছে।
পিচ ঢালাইয়ের কাজ করার আগে ৪০ নম্বর স্প্যানের উপর কমলা রঙের মেমব্রেন বিছানো হয়। মেমব্রেনের পুরুত্ব ৩ মিলিমিটার। এর উপরে ২ মিলিমিটারের বিটুমিনের স্তর দেয়া হচ্ছে। তার উপরে দেয়া হচ্ছে পিচ ঢালাই।
বুধবার (১৪ জুলাই) পিচ ঢালাইয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়া মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘প্রথম দিনে সেতুর ৬০মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০মিটার প্রস্থ অংশের পিচঢালাই কাজ করা হয়েছে। সেতুর কাজ শেষের পথে এখন। সড়ক পথে পিচঢালাই কাজ শুরু হয়েছে। পিচঢালাই শেষ হলে গাড়ি চলতে পারবে।’
এদিকে পদ্মা সেতুতে রোড স্ল্যাব বসানোর কাজও শেষের দিকে। শেষ ধাপে দুইটি স্প্যানের উপর রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো বাকি আছে। বতর্মানে ১০ নম্বর স্প্যানের উপর রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো চলছে। এই স্প্যানের ৮০ শতাংশেরও বেশি জায়গায় রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো হয়েছে। এই স্প্যানে এই পর্যন্ত ৩৬টি স্ল্যাব বসেছে। এরপর ১১ ও ১২ নম্বর স্প্যানে স্ল্যাব বসানোর সম্পূর্ণ হবে সেতুর রোডওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ।
এর আগে গত ২০ জুন শেষ হয়েছে পদ্মা সেতুর রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোর কাজ।
তড়িৎ গতিতে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করার জন্য বিভিন্ন ধাপে কাজ চলছে। এই কাজের বড় একটা অংশ হচ্ছে রোডওয়ে স্ল্যাব বসানো, সেতুর দুই পাশে সেতুতে ওঠার ও নামার পথ তৈরি, প্যারাপেট ওয়াল, রোড ডিভাইডার. গ্যাস লাইন স্থাপন, রেল লাইনের জন্য ওয়াক ওয়ে নির্মাণ এবং নদী শাসনের কাজ।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে ৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ। সেতুর মূল আকৃতি দোতলা।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদীশাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো।
২০২২ সালের জুন মাসের মধ্যেই এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা রয়েছে।