স্থানীয় একটি সিন্ডিকেটের উক্ত অংকের টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে উক্ত ব্যাংককর্মী কৌশলে আত্মসাতের ফন্দি এঁটেই অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন বলে পুলিশের ধারণা। ওদিকে উক্ত সিন্ডিকেট সদস্যদের নানা সন্দেহজনক ব্যবসার আড়ালে রোহিঙ্গা সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে কথিত অপহরণের শিকার সেই ব্যাংককর্মী হামিদ হোসেন এখন পুলিশ হেফাজতে। পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে আজ রবিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় উদ্ধার করেছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
প্রসঙ্গত, রবিবার অনলাইনে ‘তিন দিন পর মুক্ত রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত ব্যাংক কর্মকর্তা’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশের পর টেকনাফ থানা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থানা পুলিশ এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে তৎপরতা শুরু করেন।
আরো পড়ুন: ব্যাটে-বলে দারুন মিরাজ; আত্মবিশ্বাস জোগাবে মূল ম্যাচে
জি কে শামীমের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়া টাকা ফেরত নিয়েছে গণপূর্ত
টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান রবিবার রাতে জানান-‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী কর্তৃক প্রকাশ্য দিবালোকে ব্যাংককর্মী অপহরণের ঘটনাটির তদন্তে নেমে বড় ধরনের প্রতারণার ঘটনা উদঘাটন হয়েছে। উল্টো ওই ব্যাংককর্মীর এক প্রতিবেশীর কাছে জমা রাখা নগদ ১৯ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।’
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ঘুংধুম পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক আল আমিন জানান ‘উখিয়ার স্থানীয় বালুখালী এলাকার ইকবাল নামের এক ব্যক্তি আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কুতুপালং এজেন্ট শাখার কর্মী হামিদ হোসেনের কাছে তিনি ২২ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন। উক্ত হামিদ সেই টাকা না দেওয়ার জন্য নানা কল্প কাহিনীসহ গড়িমসি শুরু করেছেন।
উপ-পরিদর্শক বলেন, এমন অভিযোগ পেয়ে ব্যাংককর্মী হামিদকে কৌশলে তার ঘর থেকে ধরে ফাঁড়িতে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদে হামিদ সেই টাকা জাহাঙ্গীর নামে তার এক প্রতিবেশীর কাছে জমা রাখার কথা স্বীকার করেন। রবিবার সন্ধ্যায় হোয়াইক্যং ও ঘুংধুম ফাঁড়ি পুলিশ যৌথভাবে সেই টাকা উদ্ধার করে। পুলিশ ঘুংধুম ফাঁড়িতে হেফাজতে রেখে ব্যাংককর্মী হামিদ হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রেখেছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা মওলানা নুর আহমদ আনোয়ারী জানিয়েছেন, ব্যাংককর্মী হামিদ হোসেন একজন মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র এবং তিনি হাফেজে কোরআন। ২২/২৩ বছরের এমন একজন যুবক একটি ব্যাংকের কর্মী হয়ে এমন প্রতারণার ঘটনায় তিনি নিজেও হতবাক হয়েছেন বলে জানান।
এদিকে ব্যাংককর্মী হামিদের কাছে জমা রাখা সিন্ডিকেটটির এত বিপুল অংকের টাকার উৎস নিয়েও রয়েছে নানা কথা। অভিযোগ উঠেছে, উখিয়ার স্থানীয় বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি বড় সিন্ডিকেট ইয়াবা কারবারে জড়িত রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ব্যাংককর্মীর কাছে জমা রাখা হয়েছিল ওই সিন্ডিকেটটির টাকা।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন সকালে টেকনাফের কানজরপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে উখিয়ার কুতুপালং বাজারের কর্মস্থল উক্ত ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় আসার পথে ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার হামিদ হোসেন অপহরণ হন বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়েছিল। পরে অপহরণকারী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তার বাবার নিকট ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করাসহ তিন দিন পর তাকে মুক্তি দেওয়ার কথাও বলেছিল।